করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় ময়মনসিংহ ও আশপাশের জেলার মানুষের চিকিৎসাসেবাপ্রাপ্তি এখন দুরূহ হয়ে উঠেছে। শহরজুড়ে মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যানবাহন চলাচলও বন্ধ রয়েছে। শহরের সব দোকানপাট, অফিস-আদালত বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন ক্লিনিক-হাসপাতালও বন্ধ হয়ে গেছে। এসব অসুবিধার কথা বিবেচনা করে ময়মনসিংহে তরুণ চিকিৎসকেরা মিলে মুঠোফোনের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবা চালু করেছেন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কা থাকায় সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবাপ্রাপ্তি এখন শুধুই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালনির্ভর হয়ে পড়েছে। তবে সেখানেও চিকিৎসকেরা করোনা-আতঙ্কে রোগীদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন। অনেক সময় অপেক্ষা করেও চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া অনেকেই দূরে থাকায় যানবাহন না পেয়ে শহরে আসতে পারছে না। আবার কেউ এ সময়ে করোনা-আক্রান্ত বলে সামাজিক অপবাদের ভয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে সংকোচবোধ করছেন। এ ছাড়া চিকিৎসকেরাও রোগীদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে তাঁদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই রোগীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করেই ময়মনসিংহে তরুণ চিকিৎসকেরা মিলে টেলিমেডিসিন সেবা দিচ্ছেন।
এর মধ্যে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৮ জন তরুণ চিকিৎসক প্রাথমিক অবস্থায় ফেসবুকে প্রচারণা চালিয়ে গতকাল শুক্রবার থেকে রোগীদের সেবা দিতে শুরু করেছেন। এতে করে নিজের বাড়িতে থেকেই বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা পরামর্শ পাচ্ছেন। তাও সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত কয়েকজন তরুণ চিকিৎসক করোনা পরিস্থিতিতে রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে এই টেলিমেডিসিন সেবা চালু করেন। নাক–কান–গলা বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মাহমুদুর রহমান জানান, তাঁরা কয়েকজন সহকর্মী মিলে নিজেদের দায়বদ্ধতা থেকে এ উদ্যোগ নিয়েছেন। এতে করে সমাজের সব শ্রেণির মানুষ উপকৃত হবে। এখানে যেসব চিকিৎসক যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই ৩৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী।
প্রাথমিক অবস্থায় মেডিসিন বিভাগের নয়জন, নাক–কান–গলা (ইএনটি) বিভাগের নয়জন, চক্ষু বিভাগের দুজন ও শিশু বিভাগের আটজন বিশেষজ্ঞ—মোট ২৮ জন চিকিৎসক এই টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া শুরু করেছেন। প্রত্যেক চিকিৎসক তাঁদের নাম, ছবি ও ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বর উল্লেখ করে সম্মিলিতভাবে টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এসব চিকিৎসকদের অনেকেই সেবা প্রদানের নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে দিয়েছেন। সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সর্বনিম্ন দুই ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ আট ঘণ্টা করে সেবা দিতে তাঁরা প্রস্তুত বলে জানা গেছে।
ঠিক একইভাবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ময়মনসিংহ যুব নাগরিক সোসাইটি’-এর উদ্যোগেও টেলিমেডিসিন সেবা চালু হয়েছে। এখানে মেডিসিন, গাইনি, চক্ষু, ফিজিওথেরাপি ও নাক–কান–গলা বিভাগের মোট ১৬ জন চিকিৎসক যুক্ত রয়েছেন, যাঁরা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে কর্মরত।
ময়মনসিংহ যুব নাগরিক সোসাইটির সভাপতি শুভ্র চক্রবর্তী বলেন, মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে এবং মানুষ যেন ঘরে বসে চিকিৎসা পরামর্শ পায়, সে জন্য কয়েকজন তরুণ চিকিৎসককে এক প্ল্যাটফর্মে এনে টেলিমেডিসিন সেবা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখানে প্রত্যেক রোগী চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বরে সরাসরি কথা বলে শারীরিক সমস্যার কথা উল্লেখ করে যথাযথ চিকিৎসা পরামর্শ পাবেন।
বিনা মূল্যে টেলিমেডিসিন সেবার এ উদ্যোগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবাই প্রশংসা করছেন। এই সেবা চালুর প্রথম দিনেই প্রচুরসংখ্যক রোগী ফোন করে বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিষয়ক চিকিৎসা পরামর্শ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ময়মনসিংহ শাখার সাধারণ সম্পাদক হোসেন আহমেদ গোলন্দাজ বলেন, একদল তরুণ চিকিৎসক দেশের ক্রান্তিলগ্নে মানবতার তাগিদে এ ধরনের অনন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, নিঃসন্দেহে এটি প্রশংসার যোগ্য। ভবিষ্যতে এই টেলিমেডিসিন সেবার পরিসর আরও বড় হবে বলে তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন।