কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এখন প্রচণ্ড উত্তাল। সাগরে নেই মাছ ধরার কোনো নৌযান। কিন্তু এর মধ্যেই সৈকতে ভেসে আসছে বিপুল পরিমাণে প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিকস বর্জ্য। সঙ্গে আসছে ট্রলারের মাছ ধরার ছেঁড়া জাল। আবার বর্জ্যের সঙ্গে ভেসে আসছে বেশ কিছু মা কচ্ছপ। গতকাল রোববার সকালে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
স্থানীয় ঝিনুক ব্যবসায়ী শামসুল আলম জানান, গত শনিবার বিকেলে জোয়ারের পানিতে ভেসে আসতে শুরু করে বিপুল বর্জ্য। গতকাল বিকেল পর্যন্ত কলাতলী থেকে দক্ষিণ দিকে হিমছড়ি সৈকত পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার ছড়িয়ে পড়েছে বর্জ্য। গতকাল বিকেল পর্যন্ত বর্জ্যগুলো সরানোর উদ্যোগ নেয়নি কেউ।
স্থানীয় কয়েকজন জেলে বলেন, জোয়ারে ভেসে আসার সময় কচ্ছপগুলো জীবিত ছিল। কিছু কচ্ছপের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। সম্ভবত শক্ত বর্জ্যের আঘাতে কচ্ছপগুলো আহত ও দুর্বল হয়ে সৈকতে ভেসে আসে। তখন কুকুরের দল কামড়িয়ে কচ্ছপগুলোকে মেরে খেয়ে ফেলে।
স্থানীয় ছিন্নমূল শিশুদের সৈকতে নেমে পড়ে থাকা মদের খালি বোতল ও প্লাস্টিকসামগ্রী তুলে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এগুলো দোকানে কেজি দরে বিক্রি করবে তারা।
কক্সবাজারের পরিবেশবাদী সংগঠন ‘সেভ দ্য নেচার বাংলাদেশ’-এর চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসাইন গতকাল সমুদ্র সৈকত ঘুরে এসে প্রথম আলোকে বলেন, গত দুই দিনে সৈকতের ১০ কিলোমিটার এলাকায় অন্তত ৫০-৬০ টন বর্জ্য ভেসে এসেছে। এ সময় সৈকতে দেখা গেছে ২০টি মৃত মা কচ্ছপ। দু-একটি কচ্ছপের পেটে ডিম পাওয়া গেছে। গত দুই দিনে তাঁরা আহত আটটি কচ্ছপকে সুস্থ করে পুনরায় সাগরে ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু বর্জ্যগুলো সরিয়ে না ফেলায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।
>সৈকতের কলাতলী থেকে দক্ষিণ দিকে হিমছড়ি পর্যন্ত প্রায় ১০ কিমি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে বর্জ্য। ভেসে এসেছে অন্তত ২০টি কচ্ছপ।
স্থানীয় জেলে ও পরিবেশবাদীদের দাবি, গত ২০ মে থেকে উপকূলে ৬৫ দিনের মাছ ধরা বন্ধ কর্মসূচি চলছে। কিন্তু গভীর সাগরে দেশি–বিদেশি বহু ট্রলার মাছ ধরছে। বর্জ্যগুলো ওই সব ট্রলার থেকেই নিক্ষেপ করা হচ্ছে। আর তাঁদের জালে আটকা পড়েই মারা যাচ্ছে উপকূলে ডিম পাড়তে আসা মা কচ্ছপগুলো।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, কেন বর্জ্য ও মা কচ্ছপ ভেসে আসছে, তার অনুসন্ধান চলছে। গতকাল সকালে মৎস্য অধিদপ্তরের একটি দল সৈকতে গিয়ে তিনটি কচ্ছপকে সুস্থ করে পুনরায় সাগরে ছেড়ে দিয়েছে। এ সময় তারা সৈকতে মৃত কচ্ছপ দেখতে পায়নি। তবে বিপুল বর্জ্য পড়ে রয়েছে সেখানে।
কচ্ছপের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে এই কর্মকর্তা বলেন, পানিতে অতিরিক্ত বর্জ্য ভেসে উঠলে গ্যাসের সৃষ্টি হয়। তখন অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিলে কচ্ছপসহ সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু হতে পারে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, মাছ ধরার জালে আটকা পড়েই কচ্ছপের মৃত্যু হচ্ছে। কিন্তু বর্জ্য কেন ভেসে আসছে, তা অনুসন্ধানের বিষয়।