কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ

নতুন কমিটি ঘোষণা, প্রতিবাদে হরতাল ডাকলেন পদবঞ্চিতরা

কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান
সংগৃহীত

দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর পর নতুন নেতৃত্ব পেয়েছে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ। সাদ্দাম হোসাইনকে সভাপতি ও আবু মোহাম্মদ মারুফ আদনানকে সাধারণ সম্পাদক করে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ১৪ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটির ঘোষণা দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। এই কমিটি ঘোষণার পরই পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। গতকাল তাৎক্ষণিক শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন পদবঞ্চিতরা। শহরের ফজল মার্কেট এলাকায় টায়ারে অগ্নিসংযোগ ও সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

রাতে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আগামীকাল বুধবার জেলায় সকাল-সন্ধ্যা পূর্ণ দিবস হরতালের ডাক দিয়েছেন কমিটিবিরোধীরা। অন্যদিকে সদ্যঘোষিত কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আনন্দ মিছিল হয়েছে জেলাজুড়ে। কক্সবাজার শহর, ঈদগাঁও উপজেলা, উখিয়া উপজেলা, চকরিয়া, মাতামুহুরি, কুতুবদিয়া, মহেশখালীতে আনন্দ মিছিল করেন নেতা-কর্মীরা। বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণও করা হয়।

নতুন কমিটিতে সাদ্দাম হোসাইনকে সভাপতি, মইন উদ্দিন, কাইসার উল আলম মুন্না চৌধুরী, বোরহান উদ্দিন ও নারিমা জাহানকে সহসভাপতি করা হয়। সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে আবু মোহাম্মদ মারুফ আদনানকে। আনোয়ার হোসেন, শাখাওয়াত হোসেন, সাজ্জাদুল হক, মো. শওকত হোসেনকে (পেকুয়া) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে ওয়াসিফ কবির, কামরুজ্জামান হিরু, এহসানুল হক ও গাজী নাজমুল হককে।

১৪ সদস্যবিশিষ্ট নতুন এই কমিটিতে স্বাক্ষর করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। ইশতিয়াক আহমেদ ও মোর্শেদ হোসাইনের নেতৃত্বাধীন আগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে এক বছরের জন্য নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।

নতুন কমিটিতে সাদ্দাম হোসাইনকে সভাপতি, মইন উদ্দিন, কাইসার উল আলম মুন্না চৌধুরী, বোরহান উদ্দিন ও নারিমা জাহানকে সহসভাপতি করা হয়। সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে আবু মোহাম্মদ মারুফ আদনানকে। আনোয়ার হোসেন, শাখাওয়াত হোসেন, সাজ্জাদুল হক, মো. শওকত হোসেনকে (পেকুয়া) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে ওয়াসিফ কবির, কামরুজ্জামান হিরু, এহসানুল হক ও গাজী নাজমুল হককে।

এই কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম। কারণ, যে দুজনকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে, তাঁরা বিতর্কিত। তাঁদের ছাত্রত্ব নেই। সভাপতির বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা আছে। সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের চক্রে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ আছে।
ইশতিয়াক আহমেদ, সদ্যবিদায়ী সভাপতি

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে কক্সবাজারে সম্মেলন হয়েছিল। পরে ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি কেন্দ্র থেকে ইশতিয়াক আহমেদকে সভাপতি ও ইমরুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে কমিটি ঘোষণা করে। ইমরুল হাসান গেল ইউপি নির্বাচনে জালালাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান মোর্শেদ হোসাইন। এই কমিটি একাধিকবার সম্মেলন করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রায় ৬ বছর পর নতুন কমিটি ঘোষণা করা হলো।

নতুন কমিটির বিষয়ে সদ্যবিদায়ী সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদের বক্তব্য জানতে তাঁকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। ইশতিয়াক পোস্টে উল্লেখ করেন, ‘কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের ঘোষিত এই কমিটি অবৈধ। এই কমিটি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম। কারণ, যে দুজনকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে, তাঁরা বিতর্কিত। তাঁদের ছাত্রত্ব নেই। সভাপতির বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা আছে। সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের চক্রে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ আছে।’ একই অভিযোগ তুলে নতুন কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন সদ্যবিদায়ী সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মোর্শেদ হোসাইনও।

একটা কমিটিতে সবাইকে সভাপতি-সম্পাদক করা যায় না। কেন্দ্রীয় নেতারা আমাকে যোগ্য মনে করে সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন। এই দায়িত্বকে আমি আমানত হিসেবে পালন করব। বর্তমানে যা হচ্ছে, তা অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। হরতাল কি এ দেশের মানুষ সমর্থন করে?
সাদ্দাম হোসাইন, সদ্যঘোষিত কমিটির সভাপতি

গতকাল রাতের সংবাদ সম্মেলনে জেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ ইবনে হোসাইন বলেন, ঘোষিত পকেট কমিটির সবাই নানা অপকর্মে জড়িত। তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। মূলত নানা অপকর্মের কারণে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বহিষ্কার হওয়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী তাঁদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে এই কমিটি সাজিয়েছিলেন। বিষয়টি বর্তমান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য জানেন না। তাঁদের মিসগাইড করেই বিতর্কিতদের নিয়ে কক্সবাজারে এমন কমিটি দেওয়া হয়েছে। অযোগ্য ব্যক্তিদের হাতে নেতৃত্ব থাকলে ছাত্রলীগের সুনাম ও গৌরব বিনষ্ট হবে।

এ বিষয়ে সদ্যঘোষিত কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন বলেন, ‘একটা কমিটিতে সবাইকে সভাপতি-সম্পাদক করা যায় না। কেন্দ্রীয় নেতারা আমাকে যোগ্য মনে করে সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন। এই দায়িত্বকে আমি আমানত হিসেবে পালন করব। যৌক্তিক কোনো বিষয় থাকলে আন্দোলন করা যায়। কিন্তু বর্তমানে যা হচ্ছে, তা অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। মনোমালিন্য থাকবে। তাই বলে জ্বালাও-পোড়াও কেন হবে? হরতাল কি এ দেশের মানুষ সমর্থন করে?’ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে আমার ছাত্রত্ব আছে। যে মামলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেটাতে আমি জড়িত নই। সম্পূর্ণ মিথ্যাভাবে জড়ানো হয়েছে।’

নতুন সাধারণ সম্পাদক আবু মো. মারুফ আদনান বলেন, ‘যাঁরা আন্দোলন করেছেন তাঁদের দাবি এবং আন্দোলন সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশনা মেনে আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাব।’