দ্বিতীয় ধাপে কক্সবাজারে ৩টি উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১১ নভেম্বর। তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত ও সাধারণ ওয়ার্ডের সম্ভাব্য কয়েক শ প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকার মাঝি হতে চান ৯৮ নেতা-কর্মী। গতকাল রোববার জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারও গ্রহণ করা হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘২১টি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের জন্য যোগ্য ও জনপ্রিয়তা আছে এমন একজনকে দলের প্রার্থী ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু প্রতিটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী একাধিক। আমরা যোগ্য প্রার্থীদের নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠাব, কেন্দ্রই তালিকা থেকে একজনকে নৌকা প্রার্থী ঘোষণা করবে। চেয়ারম্যান হতে আগ্রহী এমন ৯৮ জন দলীয় নেতা-কর্মীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।’
রামুর গর্জনিয়া ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন চান তরুণ ছাত্রলীগ নেতা হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, তাঁর জ্যাঠা বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈয়ূব উল্লাহ চৌধুরী এই ইউনিয়নের তিনবারের চেয়ারম্যান ছিলেন। দেড় বছর আগে তাঁর মৃত্যু হলেও জনগণ তাঁর অবদান ভুলেননি। তাঁর অসমাপ্ত কাজ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি হাল ধরতে চান, এ জন্য দলীয় মনোনয়ন চাইছেন। তবে দল যে সিদ্ধান্ত দেবে, তিনি তা মেনে নেবেন। এই ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন চাইছেন আরও দুজন।
উখিয়ার হলদিয়াপালং থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন তরুণ যুবলীগ নেতা ইমরুল কায়েস চৌধুরী। তাঁর বাবা মাহমুদুল হক চৌধুরী উখিয়া উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। মা আশরাফ জাহান কাজল কক্সবাজার জেলা পরিষদের সদস্য। ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, দলের মনোনয়ন পেলে তিনি নিশ্চিত জয়লাভ করবেন।
দলীয় নেতারা বলছেন, নৌকা প্রতীকের পেছনে যেসব প্রার্থী দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছেন; বেশির ভাগই তরুণ, সাবেক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, প্রার্থী যাচাই-বাছাই কমিটি প্রতিটি ইউনিয়নে গ্রহণযোগ্যতা আছে এমন তিনজন প্রার্থীর নাম তৈরি করে কেন্দ্রে পাঠাবেন। কেন্দ্র সেখান থেকে যেকোনো একজনকে নৌকার প্রার্থী ঘোষণা করবে। তখন অন্য সব প্রার্থীদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামতে হবে, কাজ করতে হবে। সিদ্ধান্ত অমান্য করে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
দলীয় নেতারা বলেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার ২টি পৌরসভা (চকরিয়া ও মহেশখালী) এবং টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ১১ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ৪ জন নেতাকে দল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে মহেশখালীর একটি ইউনিয়ন কুতুবজোমে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের গোলাগুলি ও সংঘর্ষে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতায় স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যু হয়।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এস এম শাহাদাত হোসেন বলেন, গত ২৯ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন (ইসি) ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালী, চৌফলদন্ডী, ঝিলংজা, খুরুশকুল ও পিএমখালী, রামু উপজেলার চাকমারকুল, ফতেখাঁরকুল, গর্জনিয়া, ঈদগড়, জোয়ারিয়ানালা, কচ্ছপিয়া, খুনিয়া পালং, কাউয়ারখোপ, রশিদনগর, রাজারকুল, দক্ষিণ মিঠাছড়ি, উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং, জালিয়াপালং, রাজাপালং, রত্নাপালং ও পালংখালী ইউপির নির্বাচন হবে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৭ অক্টোবর। মনোনয়নপত্র বাছাই ২০ অক্টোবর, আপিল দায়ের ২১ থেকে ২৩ অক্টোবর, আপিল নিষ্পত্তি ২৪ ও ২৫ অক্টোবর, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ২৬ অক্টোবর, প্রতীক বরাদ্দ ২৭ অক্টোবর ও ১১ নভেম্বর ভোট গ্রহণ।