কক্সবাজারে মুঠোফোন চুরির মিথ্যা অভিযোগ এনে প্রবাসী রাখাইন যুবক ছেনথেন লাইন ওরফে লাইন লাইনকে (৩৫) নির্যাতনের বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
কর্মসূচি থেকে বক্তারা অভিযোগ করেন, শহরের হাসপাতাল সড়কে গত ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বর্বর কায়দায় লাইন লাইনের ওপর অমানষিক নির্যাতন চালানো হয়। এ নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে সামাজিকভাবেও সম্মানহানি করা হয়। কিন্তু ঘটনার এত দিনেও চিহ্নিত হামলাকারীদের কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এতে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ শঙ্কিত ও নিরাপত্তাহীন। দ্রুত সময়ের মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করলে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন মানুষ।
রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মং ছেন হ্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন–পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য দেন কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ রাখাইন কমিউনিটির সভাপতি ক্যনিং, জাতীয় মানবাধিকার সংগঠন এইচআরডিএফের কক্সবাজারের আহ্বায়ক অরূপ বড়ুয়া তপু, কক্সবাজার আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সদস্য ও কক্সবাজার রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি এইচ এম নজরুল ইসলাম, সাংবাদিক সংসদ কক্সবাজারের সভাপতি এম এ আজিজ রাসেল, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ জেলা শাখার সভাপতি দীপক দাশ, কক্সবাজার মডেল হাইস্কুলের শিক্ষক মাউটিন, আদিবাসী ফোরামের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মাটিটিন, কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক রাজু বড়ুয়া, বাংলাদেশ রাখাইন স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান উপদেষ্টা মংছেনহেন, রাখাইন একতা সংঘের উপদেষ্টা মংছেন য়াইন প্রমুখ। সমাবেশে বিভিন্ন মানবাধিকার, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা হামলার ঘটনায় সংহতি প্রকাশ করেন।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় শহরের হাসপাতাল সড়কের ডিজিটাল হাসপাতালের সামনে শহরের মোহাজের পাড়ার শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে কয়েকজন বখাটে যুবক মুঠোফোন চুরির অভিযোগ এনে লাইন লাইনকে ধরে বেধড়ক পিঠুনি শুরু করেন। উদ্দেশ্য, ভয়ভীতি দেখিয়ে রাখাইন যুবক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া।
লাইন লাইন বলেন, বড়বাজারের একটি স্বর্ণের দোকানের কাজ শেষ করে ওই দিন বিকেলে তিনি হাঁটতে বের হন। বৌদ্ধমন্দির সড়ক দিয়ে গোলদিঘির পাড় হয়ে সন্ধ্যায় তিনি হাসপাতাল এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে কয়েকজন যুবক এসে তাঁকে দাঁড়াতে বলেন। এরপর মুঠোফোন চুরির অপবাদ দিয়ে তাঁকে কিলঘুষিসহ বেধড়ক পেটানো শুরু করেন। একপর্যায়ে তাঁকে রশি দিয়ে বেঁধে রাস্তায় ফেলে ঘণ্টাব্যাপী অমানুষিক নির্যাতন চালালেও কেউ এগিয়ে আসেননি।
কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় না আনলে আইনের প্রতি সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধাবোধ উঠে যাবে। তাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই ন্যক্কারজনক ঘটনার মূল হোতাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। না হলে কক্সবাজারের সব ধর্মের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আরও কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে।
মানববন্ধন শেষে রাখাইন নেতারা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দেন। স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মং ছেন হ্লা ও সাধারণ সম্পাদক মং হ্লা চিং।