কক্সবাজারে রাখাইনদের সাংগ্রাই উৎসব শুরু

কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার বাসায় কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্য থিং অং তাঁর স্ত্রী সাবেক সাংসদ এথিন রাখাইনকে মঙ্গলজলে সিক্ত করছেন। শনিবার সকালে
  ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারে আজ শনিবার থেকে শুরু হয়েছে রাখাইন সম্প্রদায়ের বর্ষবরণের তিন দিনের উৎসব ‘সাংগ্রাই’। করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতির কারণে এবারও বাইরে উৎসব আয়োজন নেই। তবে ঘরে ঘরে সীমিত আকারে চলছে পরিবারভিত্তিক জলকেলি।

রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মং ছেন হ্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘরের বাইরে মণ্ডপে মণ্ডপে সাংগ্রাই পালন করছি না। কারণ, উৎসবের জনসমাগম থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবু স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছোটদের অনেকে ঘরে ঘরে জলকেলিতে মজেছে। বড়রা সেই আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন।’

বর্ষবরণ উৎসব উপলক্ষে আজ সকাল থেকে শহরের টেকপাড়া, বড়বাজার, চাউলবাজার, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, ক্যাং পাড়াসহ কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল, চৌফলদন্ডি, টেকনাফ, রামু, চকরিয়া, হারবাং এলাকার ঘরে ঘরে (পরিবারের সদস্যদের নিয়ে) চলছে শিশু-কিশোর এবং তরুণ-তরুণীদের জলকেলি উৎসব। এসব এলাকায় রাখাইন সম্প্রদায়ের অন্তত ৩০ হাজার মানুষের বসবাস।

শহরের চাউল বাজার রাখাইন পল্লিতে গিয়ে দেখা গেছে, একাধিক ঘরের আঙিনায় চলছে শিশু-কিশোরদের জলকেলি। তারা একে অপরের প্রতি জল ছুড়ে শরীর ভিজিয়ে আনন্দে মেতেছে।

অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোরী ছো ঝিমা থেন বলল, ‘করোনা আমাদের আনন্দ কেড়ে নিয়েছে, মণ্ডপে গিয়ে এবারও জলকেলি করা হলো না।’

চাউল বাজার এলাকার বাসিন্দা চয়েন প্রু বললেন, ‘আগের দুই দিন আমরা ঘরে ঘরে বৌদ্ধস্নান করে করোনামুক্ত বিশ্বের জন্য প্রার্থনা কামনা করেছি।’

সকাল থেকে শহরের বৌদ্ধমন্দির সড়কের ৪০০ বছরের পুরোনো অগ্গ্যামেধা বৌদ্ধবিহারে নারী-পুরুষের সমাগম ছিল। তাঁরা বিহারে গিয়ে খোলা মাঠে সমবেত প্রার্থনায় মিলিত হন।

পশ্চিম টেকপাড়ার ব্যবসায়ী মং হ্লা মি বলেন, ২০১৯ সালে তাঁর বাড়ির আশপাশে অন্তত তিনটি মণ্ডপে জলকেলি উৎসবে মেতেছিল হাজারো রাখাইন নারী-পুরুষ। করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই বছর জলকেলি হচ্ছে না, এতে অনেকে মন খারাপ হলেও হতাশ হওয়ার কারণ নেই।

কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্য থিং অং বলেন, ‘আজ ১৭ এপ্রিল রাখাইন অব্দ ১৩৮৩ সনের প্রথম দিন। অন্য বছর ১৭ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিন রাখাইন পল্লির ৩০টির বেশি মণ্ডপে মহাধুমধামে বর্ষবরণ উৎসব “সাংগ্রাই” বা “জলকেলি” পালিত হলেও এই দুঃসময়ে তা বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা চাই করোনামুক্ত বিশ্ব, যেখানে সব সম্প্রদায়ের মানুষ সুস্থ থাকবে।’