ওসি প্রদীপসহ ১১ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আরেক মামলা

প্রদীপ কুমার দাশ
ফাইল ছবি

টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১১ পুলিশ ও এক দফাদারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক গৃহবধূ। ১০ লাখ টাকা চাঁদার জন্য তাঁর স্বামীকে বিচারবহির্ভূত হত্যার দায়ে মামলাটি করা হয়।


আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের পশ্চিম মহেশখালীয়াপাড়ার গৃহবধূ ছেনুয়ারা বেগম মামলাটি করেন। তাঁর স্বামী আবদুল জলিল প্রকাশ গুরা পুতুইয়া (৩৯) সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ছিলেন।


গত ৭ জুলাই মধ্যরাতে উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কম্বনিয়া বড়ছড়া এলাকায় নিয়ে আবদুল জলিলকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হেলাল উদ্দিন মামলাটি আমলে নেন এবং ওই দিনের কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় থানায় করা মামলার এজাহারসহ সব কাগজপত্র ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে টেকনাফ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।


মামলার আসামিরা হলেন টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মানস বড়ুয়া, হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মশিউর রহমান, এএসআই মো. আরিফুর রহমান, এসআই সুজিত চন্দ্র দে, এসআই অরুন কুমার চাকমা, এসআই নাজিম উদ্দিন, এসআই মো. নাজিম উদ্দিন ভুঁইয়া, এএসআই রামধন চন্দ্র দাশ, কনস্টেবল সাগর দেব, রুবেল শর্মা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের দফাদার মো. আমিনুল হক।

মামলায় এসআই মশিউর রহমানকে ১ নম্বর, ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ২ নম্বর ও ডিবির পরিদর্শক মানস বড়ুয়াকে ৫ নম্বর আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য ভিসা প্রসেসিং করতে স্বামী আবদুল জলিলকে নিয়ে স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগম টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম যান। সেখান থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ৩ ডিসেম্বর তাঁরা আসেন কক্সবাজার শহরের ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতালে। মুহূর্তে হাসপাতালের সামনে থেকে আবদুল জলিল ও রফিক উল্লাহকে আটক করে গোপন আস্তানায় নিয়ে যান পরিদর্শক মানস বড়ুয়া। ১২ দিন পর রফিক উল্লাহকে একটি মামলার আসামি হিসেবে কারাগারে পাঠানো হলেও আবদুল জলিলকে রাখা হয় অজ্ঞাত স্থানে। ঘটনার তিন মাস পর অর্থাৎ চলতি ২০২০ সালের ৩ মার্চ সন্ধ্যায় হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মশিউর রহমান ছেনুয়ারার বাড়িতে গিয়ে বলেন, আবদুল জলিলকে ছাড়িয়ে আনতে হলে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। অন্যথায় তাঁর ( আবদুল জলিল) লাশের জন্য প্রস্তুত থাকতে হুমকি দেন।

স্বামীকে প্রাণে বাঁচানোর জন্য নিজের স্বর্ণালংকার বিক্রি এবং আত্মীয়স্বজন থেকে ধারকর্জ করে পাঁচ লাখ টাকা জোগাড় করেন ছেনুয়ারা। ১৬ মার্চ রাতে বাড়িতে এসে সেই পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে যান এসআই মশিউরসহ অন্যরা। কিন্তু এরপরও স্বামীকে ছেড়ে না দেওয়ায় প্রতিকার চেয়ে ছেনুয়ারা পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী বরাবরেও দরখাস্ত করেন। গত ১০ জুন ছেনুয়ারা জানতে পারেন, আবদুল জলিলকে টেকনাফ থানার একটি গোপন কক্ষে বন্দী আছেন। এরপর ছেনুয়ারা থানার গেলে ওসি প্রদীপ স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু ৬ জুলাই মধ্যরাতে উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কম্বনিয়া বড়ছড়া এলাকার হাসান মেম্বারের বাড়ির পাশে খালের পাড়ে নিয়ে আবদুল জলিলকে গুলি করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। ৭ জুলাই ভোরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসক আবদুল জলিলকে মৃত ঘোষণা করেন।


ছেনুয়ার বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ১০ লাখ টাকার চাঁদা না পেয়ে তাঁর স্বামীকে দীর্ঘ সাত মাস গোপন আস্তানায় আটকে রেখে পরে হত্যা করা হয়। ন্যায়বিচারের আশায় তিনি মামলাটি করেছেন। সাত ও চার বছর বয়সী দুই সন্তান নিয়ে তিনি মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।


টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এখন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। মামলার তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।


৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা নিহত হন। এ ঘটনায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১০ পুলিশকে গ্রেপ্তার করা হয়।