ওষুধ বিক্রির আড়ালে সেনাবাহিনীর ভুয়া নিয়োগপত্র বিক্রি করতেন মনিরুল

মনিরুলকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে আটক করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

নাটোরের বাগাতিপড়ার দয়ারামপুর এলাকার ওষুধের দোকানি মনিরুল ইসলাম ওরফে চান মন্ডল (৩০)। তবে তিনি সেনাবাহিনীর করণিক পদে কর্মরত বলে নিজেকে পরিচয় দিতেন। ভুয়া এ পরিচয় ব্যবহার করে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদে ভুয়া নিয়োগপত্র বিক্রি করতেন তিনি।

আজ শুক্রবার সকালে নাটোর র‍্যাব ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান নাটোর র‍্যাব ক্যাম্পের অধিনায়ক (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) ফরহাদ হোসেন। মনিরুলের প্রতারণার শিকার হয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের শাহিন আলম ও ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরের মো. নাসিমের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মনিরুলকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়।

ফরহাদ হোসেন বলেন, উচ্চমাধ্যমিক পাস করা মনিরুল সেনাবাহিনীর করণিক পরিচয় দিয়ে সৈনিক, অফিস সহায়ক, মেসওয়েটার ও স্টোরম্যানসহ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা নিতেন। এরপর তিনি ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করে চাকরিপ্রার্থীদের দিতেন। এরপর চাকরিপ্রার্থীরা কর্মস্থলে গিয়ে জালিয়াতির বিষয়টি যখন জানতে পারতেন, তখন তাঁদেরকে নানা ভয়ভীতি দেখাতেন। এভাবে তিনি ৭০ জনের কাছে জাল নিয়োগপত্র বিক্রি করেছেন।

র‍্যাব জানায়, এর আগেও প্রতারণার অভিযোগে মনিরুলের বিরুদ্ধে ঢাকার ভাষানটেক ও শেরেবাংলা নগর থানায় দুটি মামলা হয়েছিল। এদিকে গতকাল আটকের সময় মনিরুলের দোকান থেকে ৭টি ব্যাংকের ১৬টি চেক বই, ৭টি এটিএম কার্ড, নিয়োগ–বাণিজ্যের হিসাবের খাতা, দেশি–বিদেশি মুদ্রা, ২টি পেনড্রাইভ, ৩টি জাতীয় পরিচয়পত্র, চাকরি দেওয়ার ৩টি চুক্তিনামা স্ট্যাম্প, ১২টি নন–জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, ২টি ভুয়া নিয়োগপত্র, ২টি মুঠোফোন ও ৪টি সিম কার্ড জব্দ করা হয়।
ফরহাদ হোসেন আরও বলেন, এ ঘটনায় বাগাতিপাড়া মডেল থানায় আটক মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক মামলার প্রস্তুতি চলছে।

মনিরুলের দোকান থেকে ব্যাংকের চেক বই, এটিএম কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র, চাকরি দেওয়ার স্ট্যাম্পসহ বিভিন্ন ভুয়া নথিপপত্র জব্দ করা হয়

এদিকে প্রতারণার শিকার শাহিন আলম বলেন, সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নাম করে মনিরুল তাঁর কাছ থেকে ছয় লাখ ও মো. নাসিমের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা নিয়েছিলেন। পরে কর্মস্থলে গিয়ে তাঁরা চাকরিতে যোগদান করতে গিয়ে বুঝতে পারেন, তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন। পরে মনিরুলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাঁরা টাকা ফেরত পাননি। পরে বাধ্য হয়ে তাঁরা র‌্যাবের কাছে অভিযোগ করেন।

নাটোর র‍্যাব ক্যাম্পের উপ–অধিনায়ক (এএসপি) রফিকুল ইসলাম বলেন, আটক মনিরুল ইসলামকে বাগাতিপাড়া থানায় হস্তান্তর করা হবে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনিরুল ভুয়া নিয়োগপত্র বিক্রি করে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।