বুড়িমারী স্থলবন্দর মহাসড়ক

ওজন পরিমাপক যন্ত্র নষ্ট, ঝুঁকি

২০১৩ সালের ডিসেম্বরে প্রায় ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ওজন পরিমাপের যন্ত্রটি বসানো হয়। শুরু থেকেই এটি বিকল হয়ে আছে।

লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দরে মহাসড়কের পাশে পণ্যবোঝাই যানবাহনের ওজন পরিমাপের যন্ত্রটি নষ্ট। তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে আছে ওজন নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রটি
ছবি: প্রথম আলো

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা মির্জারকোট গ্রামে লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দরের মহাসড়কের পাশে পণ্যবোঝাই যানবাহনের ওজন পরিমাপের জন্য যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছিল। দুবার পরীক্ষামূলকভাবে তা চালুর চেষ্টা করা হলেও যন্ত্রটি বিকল হয়ে পড়ে। এরপর ১০ বছরেও যন্ত্রটি ঠিক করা হয়নি। ফলে যানবাহনে অতিরিক্ত পণ্য বহন করায় হুমকিতে পড়েছে স্থলবন্দর মহাসড়ক।

লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে প্রায় ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ওজন পরিমাপের যন্ত্রটি বসানো হয়। যন্ত্রটি স্থাপনের পর ওই মাসেই চালু করার জন্য পরপর দুবার চেষ্টা করা হয়। তবে যন্ত্রটি বিকল হয়ে যায়। যন্ত্রটি মেরামতের জন্য চীনা কোম্পানির প্রকৌশলীরা সেটি নিয়ে যান। কিন্তু তাঁরা মেরামত করতে পারেননি। দীর্ঘ ১০ বছরেও সেখানে নতুন করে ওজন পরিমাপক যন্ত্র বসানো হয়নি। ফলে দেদার চলাচল করছে অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ ট্রাক আসা-যাওয়া করে। তা ছাড়া স্থানীয়ভাবে উত্তোলন করা নুড়িপাথর ও বালুবাহী যানবাহনও এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে। এতে একদিকে নষ্ট হচ্ছে মহাসড়ক, অন্যদিকে ঝুঁকিতে পড়ছে সড়ক সেতু।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে পৌরসভার মির্জারকোট এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, ওজন নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রটি তালাবদ্ধ। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ওজন পরিমাপের জন্য তিন-চারজন কর্মচারী ছিলেন। যন্ত্রটি চালু না হওয়ায় কর্মচারীদের সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

পাটগ্রামের স্থানীয় ট্রাকমালিকেরা বলেন, শিগগির এই যন্ত্র চালু করতে হবে। তাহলে ট্রাকচালকেরা অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন করতে পারবেন না। ফলে ট্রাকের যন্ত্রাংশের আয়ু বেড়ে যাবে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে দুর্ঘটনাও ঘটবে না।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মহাসড়ক দিয়ে অতিরিক্ত পণ্য (ওভারলোডিং) বহন রোধে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় লালমনিরহাট সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন, নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার ও থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। ওই সড়ক দিয়ে বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাক আটক করে স্থানীয় বেসরকারি ওজন যন্ত্রে (স্কেল) ওজন করা হয়। এতে সাতটি ট্রাকে পণ্যের ওজন অতিরিক্ত থাকায় চালকদের কাছ থেকে ২৮ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

ইউএনও সাইফুর রহমান বলেন, সড়ক পরিবহন আইন না মেনে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনে সড়কের ক্ষতি করায় ওই জরিমানা করা হয়।

লালমনিরহাট সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার প্রথম আলোকে বলেন, ওজন পরিমাপক যন্ত্রটি স্থাপনের পর দুইবার চালু করার জন্য পরীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু যন্ত্রটি নষ্ট হয়ে যায়। পরে মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পাঠালেও তারা মেরামত করতে পারেনি। তাই সেটি অকেজো রয়েছে। এখানে একটি নতুন যন্ত্র বসাতে হবে। তা ছাড়া চার লেন সড়কের কাজ শুরু হলে এই যন্ত্র স্থাপন করা হবে। সেখানে অতিরিক্ত মালামাল নামানোর জায়গাও থাকবে।