অপু আহম্মেদ জন্ম থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। শেরপুর জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সমন্বিত অন্ধ শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় পরিচালিত খুনুয়া চরপাড়া মৌলভীনগর উচ্চবিদ্যালয় থেকে সে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৪ পেয়ে কৃতকার্য হয়েছে। অপু শেরপুর শহরের খরমপুর এলাকার ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া ও দেলোয়ারা বেগমের দ্বিতীয় ছেলে।
গত মঙ্গলবার বিকেলে শহরের খরমপুর এলাকার বাসায় কথা হয় অপু আহম্মেদের সঙ্গে। সে জানায়, ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি তার বেশ আগ্রহ ছিল। পরীক্ষায় পাস করায় তার ভালো লাগছে। তবে ফলাফল আরও ভালো হলে বেশি আনন্দ হতো। শ্রুতলেখন পদ্ধতিতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী অপুকে এসএসসি পরীক্ষায় সহযোগিতা করেছিল তারই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিফাত রাব্বানী। অপু প্রশ্নের উত্তর বলার পর তার সহযোগী সিফাত খাতায় উত্তর লিখে দিয়েছিল।
অপু জানায়, ব্রেইল পদ্ধতিতে সে লেখাপড়া করেছে। মুঠোফোন, অডিও রেকর্ডার আর শিক্ষকের মুখ থেকে শুনে সে পড়া মুখস্থ করত। পড়ালেখার ব্যাপারে মা–বাবা আর শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা ছিল অনেক। তবে মাধ্যমিক পর্যায়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য গণিত বিষয়টি আরও আধুনিক করার জন্য সে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানায়।
অপুর মা দেলোয়ারা বেগম বলেন, তাঁর ও তাঁর স্বামীর রক্তের গ্রুপ একই এবং তাঁরা সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাইবোন। চিকিৎসকদের মতে, বাবা-মায়ের রক্তের গ্রুপ এক হলে এবং পরস্পর আত্মীয় হলে সন্তান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হতে পারে। এর ফল হিসেবে তাঁদের দুটি সন্তানই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। অপুর বড় ভাই দীপু আহম্মেদও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বলে তিনি জানান।
অপু সমাজের বোঝা হয়ে বাঁচতে চায় না। লেখাপড়া শিখে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে সামর্থ্যবান মানুষের মতো কাজ করে বেঁচে থাকতে চায় সে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে সে একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চায়। ভবিষ্যতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করতে চায়। এ জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করে সে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের সমন্বিত অন্ধ শিক্ষা কার্যক্রমের প্রশিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী অপু মেধাবী ছাত্র। সে ভালো গান গাইতে পারে। সরকারি পর্যায়ে তাকে সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রাখা হলে সে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশা করেন।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোয় অপু আহম্মেদকে নিয়ে ‘আলোকিত হতে চায় অপু’ শীর্ষক একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।