এমপিওভুক্তির দাবিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষক সংগঠনের অবস্থান

রোদ–গরম উপেক্ষা করেই শিক্ষকেরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন
ছবি: প্রথম আলো

এমপিওভুক্তির দাবিতে গাজীপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশন নামের একটি সংগঠন। আজ সোমবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে এ কর্মসূচি পালন করছে তারা। এই কর্মসূচিতে দেশের ৬০ জেলার প্রায় এক হাজার শিক্ষক অংশ নিয়েছেন।

অবস্থানরত শিক্ষকেরা বলেন, দেশের বিভিন্ন বেসরকারি কলেজগুলোতে বিভিন্ন সময় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষক বিধি মোতাবেক নিয়োগ পেয়েছেন। তবে তাঁরা দীর্ঘদিন এমপিওর বাইরে রয়েছেন। পাশাপাশি তাঁরা সব ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাঁদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে শতভাগ বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ কলেজ সেটি দিচ্ছে না। এর মধ্যে করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক কলেজ নামমাত্র বেতন দিয়েছে। তাই তাঁরা জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নেমেছেন।

ফেডারেশনের সভাপতি হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে আমরা বৈষম্যের শিকার। দাবি আদায়ের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছি, কিন্তু তারপরও আমাদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসছে না। তাই বাধ্য হয়েই আজ বিশ্ববিদ্যালয় ফটকে অবস্থান নিয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে।’

বেলা দুইটার দিকে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে শিক্ষকেরা মাটিতে কাগজ, ব্যানার বিছিয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। এতে কোনো গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ঢুকতে বা বের হতে পারছে না।

নওগাঁ থেকে এসেছেন মো. জিয়াউর রহমান। তিনি আট বছর ধরে উত্তরা কলেজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন। বিধি মোতাবেক এখন তাঁর ৪০ হাজার টাকা মাসিক বেতন পাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি কোনো বেতন পান না বলে দাবি করেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ নামমাত্র যে সম্মানী দিত, সেটাও এখন বন্ধ। তাই জীবন-জীবিকা নিয়ে বিপাকে পড়ে তিনি আন্দোলনে নেমেছেন।

মূল ফটকের সামনে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচির কারণে কোনো গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ঢুকতে বা বের হতে পারছে না

জিয়াউর বলেন, ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, আর পারছি না। পরিবার, সংসার নিয়ে পথে বসার অবস্থা। এত দিন ধরে এমপিওভুক্তির আশায় অন্য কোনো পেশার কথা চিন্তা করি নাই। কিন্তু এখন সব দিক থেকেই ক্ষতি।’

শিক্ষকদের ভাষ্য, তাঁরা এমপিওভুক্তির দাবি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ লাগবে বলে জানানো হয়েছে বলে শিক্ষকেরা দাবি করেন। তাই তাঁরা সকাল থেকে এখানে আন্দোলন করছেন।

সভাপতি হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আমাদের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবেন। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ের কেউ একজন এসে আমাদের আশ্বস্ত করবেন। তাহলে আমরা এখান থেকে সরে যাব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমপিওভুক্তির বিষয়টি আমাদের না। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী বা অর্থসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করাটাকেই আমি উচিত বলে মনে করি। তাঁরা যদি যৌক্তিক দাবি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেন এবং আমার কোনো সুপারিশ প্রয়োজন হয়, তাহলে আমি বিষয়টি অবশ্যই দেখব। কিন্তু তাঁরা এসব না করে সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট আটকে যে কাজ করছেন, তা অযৌক্তিক।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে পুলিশের একটি দলকে অবস্থান করতে দেখা গেছে। গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, সড়ক অবরোধ বা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সেখানে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা আছে। তবে সেখানে এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।