এবার রামুতে মৃত হাতি উদ্ধার, বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যার অভিযোগ

কক্সবাজারের রামুর বনাঞ্চলে পড়ে আছে মৃত হাতিটি। রোববার বিকেলে
প্রথম আলো

কক্সবাজারের চকরিয়ায় গুলি করে হাতি হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার রামুর বনাঞ্চলে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে আরেকটি হাতিকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ রোববার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত মৃত হাতিটি রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ির বনের পাশে পড়ে ছিল।

কক্সবাজার (দক্ষিণ) বন বিভাগের পানেরছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেন, আজ বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে বন্য হাতির মৃত্যুর খবর জানতে পারেন তিনি। এরপর তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছান। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত হাতির মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। তবে হাতির ওপরের অংশে (শরীরে) আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। হাতিটি বেশ বয়স্ক। ভেটেরিনারি সার্জনকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে হাতির মৃত্যুর আসল কারণ। তবে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ, বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হাতিটিকে হত্যা করা হয়েছে।

তৌহিদুর রহমান বলেন, যেখানে মৃত হাতিটি পড়ে রয়েছে, সেটি জোতজমি, এর পাশেই বন। ঘটনাস্থলের প্রায় ২০০ মিটার দূরে বাড়িঘর রয়েছে। এসব বাড়িঘরে বিদ্যুৎ–সংযোগ আছে। হাতিটিকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করা হয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যেকোনোভাবে হত্যা করার আলামত পেলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

৬ নভেম্বর চকরিয়ায় তিন বছর বয়সী একটি বন্য হাতিকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এরপর ওই হাতিকে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। ৮ নভেম্বর সকালে স্থানীয় বন বিভাগ উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের গহীন জঙ্গল কালাপাড়া নামক এলাকা থেকে মাটি খুঁড়ে মরদেহটি উদ্ধার করে।

চকরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুপন নন্দী ও ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সহকারী ভেটেরিনারি সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান হাতিটির ময়নাতদন্ত করেন। সুপন নন্দী প্রথম আলোকে বলেন, স্ত্রী হাতিটির বয়স আনুমানিক তিন বছর। হাতিটির কপালে একটি গুলি করা হয়েছে। গুলির কারণে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় হাতিটি মারা গেছে।

স্থানীয় বনকর্মীরা বলেন, ৬ নভেম্বর রাতে হাতিটিকে গুলি করার পর মারা গেলে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। বনাঞ্চল উজাড় হওয়ায় খাবারের সন্ধানে হাতির দল লোকালয়ে নেমে এসে লোকজনের ধানখেত খেয়ে ফেলে। হাতির পাল ধানখেতে ঢুকলেই গুলি করা হয়। যে স্থানে হাতিটি পুঁতে রাখা হয়েছে, এর পাশেই রয়েছে ধানখেত। একইভাবে ধানখেত রক্ষায় কিছু কিছু এলাকায় বৈদ্যুতিক তার টেনে রাখা হয়। সেই তারে হাতি আটকা পড়লে মারা পড়ে।

কক্সবাজারের পরিবেশবাদী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ধানখেত রক্ষার জন্যই লোকজন বৈদ্যুতিক শক ও গুলি করে বন্য হাতি হত্যা করছে। গত ২ বছরে কক্সবাজার অঞ্চলে অন্তত ১৩টি বন্য হাতি হত্যা করা হয়েছে।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, গুলি করে হাতি হত্যার ঘটনায় চকরিয়া থানায় চিহ্নিত দুই ব্যক্তিসহ অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রামুতে হাতি মৃত্যুর ঘটনা অনুসন্ধান করে অনুরূপ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।