পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়

এবার প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে সোমবার দুপুরে প্রশাসনিক কার্যালয়ে তালা মেরে সেখানে বিক্ষোভ করেছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী
ছবি: হাসান মাহমুদ

রেজিস্ট্রারের কার্যালয় ঘিরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন একদল শিক্ষার্থী। আজ সোমবার দুপুরে তাঁরা শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে প্রশাসনিক কার্যালয়ে তালা মেরে সেখানে বিক্ষোভ করেন।

শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরিস্থিতিতে ১০ দিন ধরে রেজিস্ট্রারের কার্যালয় বন্ধ থাকায় তাঁদের ফলাফল, পরীক্ষার ফরম পূরণ ও পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ দুজনের পদত্যাগ দাবি করেছেন তাঁরা। অন্যথায় বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

এর আগে শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যেও নির্ধারিত রিজেন্ট বোর্ডের সভা না করে, ১০২ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও পদোন্নতি ঝুলিয়ে রেখে এবং শিক্ষার্থীদের সেশন জটে ফেলে গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়াদ শেষ করেন এম রোস্তম আলী। ৯ দিন আগে মেয়াদ শেষের আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি চুপিসারে ক্যাম্পাস ছাড়েন উপাচার্য। সেদিনই বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা পরিষদ ১৭ দফা দাবি জানিয়ে রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। কর্মকর্তাদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে রোববার সকালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ঝাড়ুমিছিল করে উপাচার্যকে ধিক্কার জানান।

আজ সোমবার দুপুরে সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের দেওয়া তালা ঝুলে আছে। নতুন করে শিক্ষার্থীরা তালা ঝুলিয়েছেন প্রক্টর ও ছাত্র উপদেস্টার কার্যালয়ে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন কার্যালয়ের বাইরে। আর শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে বসে বিক্ষোভ মিছিল করছেন।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, বিভিন্ন সমস্যা ঝুলিয়ে রেখে মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯ দিন আগে উপাচার্য গোপনে ক্যাম্পাস ছেড়ে যান। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের পদ শূন্য। কর্মকর্তারা ১০ দিন ধরে রেজিস্ট্রারের কার্যালয় তালাবদ্ধ করে রেখেছেন। এতে তিনিও কার্যালয়ে ঢুকতে পারছেন না। ফলে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা ছাড়া কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নেই। এত কিছুর পরও সমস্যা সমাধানে তাঁরা কোনো উদ্যোগ নেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকটকালে দুইজনই গা ঢাকা দিয়ে আছেন। ফলে শিক্ষার্থীরা মনে করছেন তাঁদের আর দায়িত্বে থাকার প্রয়োজন নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হাসিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সঠিক নয়। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় সমস্যা সমাধানের কোনো এখতিয়ার রাখেন না। এমন কোনো দায়িত্বও তাঁদের নেই। তাই কয়েক দিন ধরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রাখার চেষ্টা করছেন। নতুন উপাচার্য না এলে এই সমস্যার সমাধান হবে না বলে মনে করেন তিনি।

রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে তালা দেওয়ার বিষয়ে কর্মকর্তা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সোহাগ হোসেন বলেন, ‘উপাচার্য সমস্যা ঝুলিয়ে রেখে মেয়াদকাল শেষ করেছেন। এখন আমরা নতুন উপাচার্যের অপেক্ষায় আছি। নতুন উপাচার্য এলে আলোচনা সাপেক্ষে তালা খোলা হবে।’

রেজিস্ট্রার (চলতি দায়িত্ব) বিজন কুমার ব্রহ্ম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন কার্যালয় বন্ধ থাকলে দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে সেটাই স্বাভাবিক। আমি এখন অভিভাবক শূন্য। দর্শকের ভূমিকা ছাড়া আমার কিছু করার নেই। নির্দেশনা আর নতুন উপাচার্যের অপেক্ষায় আছি। আশা করছি নতুন উপাচার্য এলেই সব সমস্যার সমাধান হবে।’