নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একটি এতিমখানায় রাতের খাবার খেয়ে এক শিশুর মৃত্যু ও ১৭ শিশু অসুস্থ হওয়ার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান এ তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এর প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তারিকুল আলমকে।
এদিকে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এতিমখানা ও মাদ্রাসার ছয় শিক্ষককে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। ভোরে তাঁদের এতিমখানা থেকে পুলিশের একটি দল বেগমগঞ্জ থানায় নিয়ে যায়। এ ছাড়া এই ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নিহত শিশুর পরিবারকে থানায় আসতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম জানান, কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এর ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ কামরুজ্জামান সিকদার বলেন, ছয়জন শিক্ষককে আজ ভোরে থানায় নিয়ে আসা হয়। তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখা হচ্ছে। ওসি বলেন, নিহত শিশুর বাবা প্রবাসী। এ কারণে শিশুটির চাচাকে থানায় আসতে বলা হয়েছে। তিনি এলে যদি মামলা করতে রাজি হন, তাহলে মামলা নেওয়া হবে।
এতিমখানা ও মাদ্রাসাটির শিক্ষক দাউদ ইব্রাহিম বলেন, গতকাল সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের মদিনাতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার ২০ জন ছাত্রকে দুপুরে রান্না করা গরুর মাংস দিয়ে রাতের খাবার দেওয়া হয়। খাবার খাওয়ার সময় শিশুরা দুর্গন্ধ টের পেলে মাংস না খেয়ে ঝোল দিয়ে খাবার (ভাত) খায়। রাতের একপর্যায়ে তারা বমি করে এবং পেটব্যথায় কাতরায়।
দাউদ ইব্রাহিম জানান, পরিস্থিতি খারাপ দেখে তাঁরা প্রথমে স্থানীয় এক পল্লি চিকিৎসককে ডেকে আনেন। তিনি শিশুদের অবস্থা দেখে দ্রুত নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। পরে রাত পৌনে ১১টা থেকে সোয়া ১২টা পর্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় ১৮ শিশুকে জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর নিশান নূর হাদি (১০) নামের এক শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। বাকি ১৭ জন শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম আজ বলেন, ভর্তি থাকা ১৭ জন শিশুর মধ্যে একজনের অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন।
জেলা সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখার জানান, পরিবেশন করা খাবারের নমুনা গতকাল রাতেই সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই নমুনা একজন স্যানিটারি পরিদর্শক ঢাকার মহাখালীতে স্বাস্থ্য বিভাগের পরীক্ষাগারে নিয়ে যাবেন। পরীক্ষার পর এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।