ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে নিজেরাই ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। হাসপাতালে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় এই আশঙ্কা তাঁদের।
তাঁদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশন মশা নিধন করতে সেখানে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বারবার বলার পরও পদক্ষেপ না নেওয়ায় তাঁরা অনেকটা হতাশ। এ ছাড়া মশার উপদ্রবের কারণে শঙ্কায় আছে হাসপাতালে থাকা অন্য রোগীসহ স্বজনেরাও।
হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক ও কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা জানান, ডেঙ্গু মশাবাহিত রোগ। ডেঙ্গু রোগীকে কোনো মশা কামড়ানোর পর যদি তা সুস্থ মানুষকে কামড়ায়, তাহলে ওই সুস্থ মানুষও ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যদিও ডেঙ্গু রোগীদের মশারির মধ্যে রাখা হচ্ছে, তারপরও যখন তারা বাইরে যায় বা অন্য কোনো কাজ করে, তখন কোনো মশা কামড়াতেই পারে। আর যেহেতু হাসপাতালে বিপুলসংখ্যক অন্য রোগী রয়েছে, তাই তারাও ডেঙ্গু আক্রান্ত হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, ডেঙ্গু রোগীদের পাশে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও নার্সদের থাকতে হচ্ছে। সুতরাং ওই ঝুঁকি থেকে তাঁরাও বাদ যাচ্ছেন না। চিকিৎসকেরা যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে রোগীদের চিকিৎসা কে দেবেন, সেই প্রশ্ন রাখেন তাঁরা।
তাঁদের দাবি, সিটি করপোরেশন যদি হাসপাতাল এলাকায় প্রতিদিন মশা মারার অভিযান পরিচালনা করে, তাহলে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
ওই হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের চিকিৎসক মো. ইউনুসুজ্জামান খান বলেন, ডেঙ্গু এখন এক আতঙ্কের নাম। চিকিৎসক থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ওই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায় দেখা গেছে, ডেঙ্গু রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক ও নার্সরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। তাই মশা কামড়ালেই এখন মানুষ আতঙ্কে ভুগছে। ওই আতঙ্ক থেকে চিকিৎসকেরাও বাদ যাচ্ছেন না। এসব কারণে হাসপাতাল এলাকায় মশার উপদ্রব কমানো উচিত।
>ডেঙ্গু রোগীকে কোনো মশা কামড়ানোর পর যদি তা সুস্থ মানুষকে কামড়ায়, তাহলে ওই সুস্থ মানুষও ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
দোতলার করিডরে থাকা রোগীর স্বজন আসমা খাতুন বলেন, তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাগেরহাট থেকে তাঁরা ওই হাসপাতালে এসেছেন। দুই দিন ধরে হাসপাতালে রয়েছেন। হাসপাতালে প্রচুর মশা। কয়েল দিয়েও মশা তাড়ানো যাচ্ছে না। যেভাবে সবার ডেঙ্গু হচ্ছে, তাতে মশা দেখলেই ভয় লাগছে।
জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক এ টি এম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, হাসপাতাল এলাকায় মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সিটি মেয়রকে অনুরোধ করা হয়েছে। এক সপ্তাহ পর ফগারিং করেছে। এরপর নিজেদের খরচে মশা নিধন করার জন্য বলেছেন মেয়র। কিন্তু হাসপাতালে ওই বাবদ কোনো বরাদ্দ নেই। হাসপাতাল থেকে প্রতি মাসে সিটি করপোরেশনকে ট্যাক্স দেওয়া হয় আড়াই লাখ টাকা। কিন্তু ওই ট্যাক্সের বিনিময়ে কিছুই পাওয়া যায় না। এই সংকট মুহূর্তেও সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। চিকিৎসকেরা যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে এত রোগী সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের আশপাশে লম্বা লম্বা ঘাস আর ঝোপজঙ্গলে পরিপূর্ণ। নালাসহ বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির পানি জমে আছে। ভবন সম্প্রসারণের কাজ চলায় হাসপাতালের বাইরে এখানে-সেখানে ছড়িয়ে আছে ইট ও বালু। হাসপাতালে এতটাই রোগীর চাপ যে হেঁটে যাওয়ার জায়গা নেই। বেডের পাশাপাশি বারান্দা, করিডরসহ বিভিন্ন জায়গায় রোগীর ছড়াছড়ি। হাসপাতালের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সেখানে রোগী ছিল ১ হাজার ১২১ জন। এর মধ্যে ৮৯ জন রয়েছে ডেঙ্গু রোগী। প্রত্যেক রোগীর সঙ্গে অন্তত তিনজন স্বজন রয়েছে। সব মিলিয়ে হাসপাতালে প্রায় চার হাজারের মতো মানুষ অবস্থান করছে। কর্মকর্তারা বলেন, শুধু প্রত্যেক রোগীর পরিবার থেকে যদি মাত্র একটি করে কাগজ ফেলানো হয়, তার পরিমাণও দাঁড়াবে এক হাজারের বেশি। জনবলসংকটে সব সময় পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হয় না। তবে সাধ্যমতো চেষ্টা করা হচ্ছে। শুধু পরিচ্ছন্ন করলেই হবে না। মশা যেন না জন্মায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। আর ওই কাজটি করবে সিটি করপোরেশন।
খুলনা সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আবদুল আজিজ বলেন, সব জায়গাতেই মশা নিধন কার্যক্রম চলছে। হাসপাতালেও ফগারিং করা হয়েছে। মাঝেমধ্যে সেখানে ওই কার্যক্রম চলবে।