চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর শিকলবাহা খালের ওপর অবস্থিত কালারপুল সেতু ভেঙে গেছে ১২ বছর আগে। জেলার কর্ণফুলী ও পটিয়া উপজেলার সংযোগকারী মইজ্জারটেক-পাঁচরিয়া সড়কে এই সেতুর অবস্থান। সেতুর অভাবে চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কর্ণফুলী ও পটিয়ার শিক্ষার্থীসহ প্রায় দুই লাখ মানুষ। দেড় বছর আগে নতুন পাকা সেতুর কাজ শুরু হলেও তা শেষ হয়নি এখনো। ফলে সেতুর জন্য অপেক্ষাও শেষ হয়নি এই এলাকার বাসিন্দাদের।
পটিয়ার চাষাড়া এলাকার নজরুল ইসলাম চট্টগ্রাম শহরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। চাষাড়া থেকে মইজ্জারটেক-পাঁচরিয়া সড়কে এসে নৌকায় খাল পার হয়ে তাঁকে শহরে যাতায়াত করতে হয়। ঠিক সময় কর্মস্থলে পৌঁছাতে ঘর থেকে ঘণ্টাখানেক আগেই বের হতে হয় তাঁকে। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় খালে প্রায়ই নৌকা থাকে না। তখন আবার শান্তির হাট হয়ে ঘুরে যেতে হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা কী পরিমাণ কষ্ট পাচ্ছি তা বলতে পারব না। রাত ১০-১১টা বেজে গেলে কোনো নৌকা থাকে না, তখন শান্তির হাট হয়ে ঘুরে যেতে হয়।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিকলবাহা, পটিয়া উপজেলার কোলাগাঁও, হাবিলা সদ্বীপ, কুসুমপুরা, ধলঘাট, গৈড়লাসহ আশপাশের এলাকার চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ বহু সাধারণ মানুষ কালারপুল সেতুর ওপর দিয়ে চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াত করত। একইভাবে কর্ণফুলী উপজেলার লোকজন কালারপুল হয়ে যাওয়া-আসা করতেন পাঁচুরিয়া, হাবিলা সদ্বীপ, পটিয়া ও বোয়ালখালী এলাকায়। সেতুর ওপর দিয়ে রিকশাসহ চলাচল করত জিপ, মিনিবাস ও ছোটখাটো ট্রাক। কিন্তু ২০০৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর একটি মালবাহী বার্জের ধাক্কায় কালারপুল সেতুটি ভেঙে যায়। এতে বন্ধ হয়ে যায় সংশ্লিষ্ট এলাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম শহরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েন এলাকার লোকজন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্র জানায়, সেতু ভেঙে যাওয়ার পর ২০১৩ সালে সওজ ৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে শিকলবাহা খালের ওপর একটি বেইলি সেতু স্থাপন করে। ২০১৪ সালের ৮ মার্চ যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সেতুটির উদ্বোধন করেন। কিন্তু ২০১৫ সালের ২ আগস্ট ওই সেতুটিও দেবে যায়। পরে ২০১৭ সালের জুনে ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পাকা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৮৪ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২৫ মিটার প্রস্থ এবং চারটি স্প্যানবিশিষ্ট সেতুটির কাজ পায় রানা বিল্ডার্স ও হাসান বিল্ডার্স। তাদের কাছ থেকে কাজটি নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাকির এন্টারপ্রাইজ। গত বছরের জুন মাসে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে নির্মাণকাজ শেষ করার সময়সীমা এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়।
স্থানীয় লোকজন জানান, গত ১২ বছর আশপাশের এলাকার মানুষ নৌকায় করে শিকলবাহা খাল পার হয়ে যাতায়াত করলেও অপেক্ষাকৃত দূরের লোকজনকে যাতায়াত করতে হচ্ছে ভিন্ন সড়ক দিয়ে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে। এতে টাকা ও সময়ের অপচয় হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতুর ২টি স্প্যান ও ১০টি গার্ডার এখনো বসানো হয়নি। সেতুর পাশে একটি নৌকা দিয়ে বিনা মূল্যে যাত্রী পারাপার করছেন সেতুটির ঠিকাদারের লোকজন। তবে যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় টাকার বিনিময়ে অন্য নৌকা দিয়ে পার হচ্ছিলেন লোকজন।
কালারপুল ওমরা মিয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুনতাহা ফারিয়া জানায়, ‘আমাদের স্কুলের প্রায় দুই শ শিক্ষার্থী নৌকা দিয়ে খাল পার হয়ে বিদ্যালয়ে যায়। বর্ষাকালে খালের পানি বেড়ে যায়। পারাপারে ঝুঁকিও বাড়ে।’
জানতে চাইলে কালারপুল সেতু প্রকল্পের ঠিকাদার জাকির এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক মো. মহসিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, আশা করি আগামী জুন মাসের আগে সেতুর কাজ শেষ করতে পারব।’
দোহাজারী সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, সেতুর কাজের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে।