এক বছরের বেশি সময় ধরে ভাই-ভাবির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে আলোচনায় এসেছেন আবদুল কাদের মির্জা। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই। সেই সঙ্গে কাদের মির্জা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়রও। দীর্ঘ ৩৩ মাস পর আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ওবায়দুল কাদের তাঁর নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে আসেন। এ সময় ওবায়দুল কাদেরকে ‘বীর ৭১ সম্মাননা’ ক্রেস্ট প্রদান করেন ছোট ভাই কাদের মির্জা।
এ সময় জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ও জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
দীর্ঘদিন পর ওবায়দুল কাদেরের নিজ নির্বাচনী এলাকায় আগমন উপলক্ষে আজ তাঁর গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক ভোজের আয়োজন করেন বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। তাতে কয়েক হাজার মানুষের খাবারের আয়োজন ছিল। তবে ওই অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাননি ওবায়দুল কাদেরের অনুসারী ও কাদের মির্জার প্রতিপক্ষ উপজেলা আওয়ামী লীগের মূল অংশের নেতা-কর্মীরা।
ওবায়দুল কাদেরের অনুসারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বেলা তিনটায় ডাক বাংলো এলাকায় ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সেখানে যোগ দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমি যখন কোম্পানীগঞ্জে এসেছি আপনাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হইতে হবে। আমি অচিরেই বৈঠক ডাকব। দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে এ সমস্যার সমাধান করব।’
আমি অচিরেই বৈঠক ডাকব। দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে এ সমস্যার সমাধান করব।ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী
২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি পৌরসভা নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণাকালে জাতীয় নির্বাচন, ক্ষমতাসীন দলের সাংসদের অপরাজনীতি, টেন্ডারবাজি, চাকরি–বাণিজ্যসহ নানা বিষয়ে বক্তব্য রেখে আলোচনায় আসেন ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা। একপর্যায়ে তিনি দলের মন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ নেতা এমনকি বড় ভাই ওবায়দুল কাদের ও ভাবি ইশরাতুন্নেসা কাদেরের বিরুদ্ধেও নানা বিষোদ্গার শুরু করেন।
দলীয় সূত্র জানায়, ভাই-ভাবির বিরুদ্ধে কাদের মির্জার একের পর এক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগে বিভক্তি দেখা দেয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে দলের বৃহৎ অংশ কাদের মির্জার বিপক্ষে যান। তাঁরা পৃথকভাবে ওবায়দুল কাদেরের পক্ষে মাঠে নামলে ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম হামলার ঘটনা ঘটে চাপরাশিরহাটে। সেখানে প্রাণ হারান স্থানীয় সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির।
এরপর ৯ মার্চ বসুরহাটে দুই পক্ষের সংঘর্ষে মারা যান শ্রমিক লীগ নেতা আলাউদ্দিন। আলাউদ্দিন মিজানুর রহমানের অনুসারী ছিলেন। এ ছাড়া ২০২১ সালজুড়ে কোম্পানীগঞ্জে কাদের মির্জা ও মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার অনেক ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় উভয় পক্ষে কমপক্ষে ৭২টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি হয়েছে দুই পক্ষের কমপক্ষে সাত-আট হাজার দলীয় নেতা-কর্মী।