রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) ও সিটি স্ক্যান যন্ত্র এক বছরের বেশি সময় ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এর মধ্যেই প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন আরেকটি এমআরআই যন্ত্র স্থাপন করা হলেও গত এক মাসে তা চালু হয়নি।
ফলে রোগীদের দ্বিগুণের বেশি টাকা খরচ করে বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে। এতে অনেকেই অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হওয়ায় রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের প্রধান নাজমুন নাহার গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, পুরোনো এমআরআই ও সিটি স্ক্যান যন্ত্র মেরামত করার জন্য প্রতি মাসে পরিচালককে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। শেষে নতুন আরেকটি এমআরআই যন্ত্র স্থাপন করা হয়। কিন্তু যে কোম্পানি এটি স্থাপন করেছে, তারা এখনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এটি বুঝিয়ে দেয়নি। অন্যদিকে সিটি স্ক্যান যন্ত্রটিও মেরামত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
রেডিওলজি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পুরোনো এমআরআই যন্ত্রটি গত বছর মার্চ ও সিটি স্ক্যান যন্ত্রটি একই বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।
গুরুত্বপূর্ণ দুটি যন্ত্র বন্ধ থাকায় রোগনির্ণয়ের আধুনিক চিকিৎসাসেবা থেকে রংপুর বিভাগের আট জেলার রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছে। চালু থাকলে প্রতিদিন কমপক্ষে ২টি যন্ত্র থেকে ৫০ জনের রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হতো। বর্তমানে সরকারি হাসপাতাল নির্ধারিত ফির দ্বিগুণ খরচ করে বাইরে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এমআরআই ও সিটি স্ক্যান যন্ত্রের মাধ্যমে মানবদেহের রোগ নির্ণয় করা হয়। সাধারণত মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের সমস্যা নির্ণয়ে এমআরআই যন্ত্র বেশি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া টিউমার, স্তনক্যানসার, যকৃতের জটিলতা নির্ণয় এবং হৃদ্যন্ত্রের জটিলতা, পিঠ ও হাঁটুর আঘাতের ধরন জানার জন্য এ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। সরকারি হাসপাতালে এ যন্ত্র দিয়ে রোগনির্ণয়ে খরচ হয় তিন হাজার টাকা। বাইরে এই খরচ দ্বিগুণ, অর্থাৎ ছয় হাজার টাকা।
সিটি স্ক্যান যন্ত্রে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে সরকারি হাসপাতালে খরচ পড়ে সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা। বাইরে সিটি স্ক্যান করাতে গেলে সর্বনিম্ন চার হাজার থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা লাগে।
গতকাল রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় কয়েক রোগীর স্বজনের সঙ্গে। তাঁরা হাসপাতালে এমআরআই যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা যায় কি না, তার খোঁজ করছিলেন। যন্ত্র নষ্ট জানার পর পীরগাছা উপজেলার বাসিন্দা ও পেশায় ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক বলেন, এত বড় সরকারি হাসপাতালে যদি যন্ত্রই মাসের পর মাস নষ্ট থাকে, তাহলে গরিব মানুষ কীভাবে চিকিৎসা পাবে?
নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে আসা মোকাররম হোসেন বলেন, সরকারি হাসপাতালের বাইরে এমআরআই টেস্ট করালে প্রায় ছয় হাজার টাকা খরচ হয়। হাসপাতালে যেহেতু যন্ত্র নষ্ট, এখন বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে করাতে হবে।
নতুন এমআরআই যন্ত্রটি কবে নাগাদ চালু হবে, তা জানাতে পারেননি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক রেজাউল করিমও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নতুন এমআরআই যন্ত্রটি স্থাপন হলেও কোম্পানি এখনো হস্তান্তর করেনি। কবে নাগাদ চালু হবে, তা–ও বলা যাচ্ছে না।