মো. মোবারকের বাবা রফিক মোল্লা ছিলেন পাটকলশ্রমিক। এক ভাই, তিন বোনসহ ছয়জনের সংসার চলত না বাবার সামান্য আয়ে। ২০ বছর আগে সংসারের অনটনে নবম শ্রেণি থেকে পড়ালেখা ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে। শুরু করেছিলেন ছোট একটি মুদিদোকান। ২০১১ সালে মোবারকের গ্রাম কেশবপুরে বিএম কনটেইনার ডিপো স্থাপন করা হলে ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে তাঁর। দোকান, ভাড়া ঘরসহ বিভিন্ন ব্যবসায় উন্নতি করে সুখী জীবন গড়েছিলেন তিনি। কিন্তু শনিবার রাতের এক বিস্ফোরণ মুহূর্তেই তাঁর জীবনকে শূন্য করে দিয়েছে।
মোবারকের বাড়ি সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বিএম কনটেইনার ডিপোর পাশের কেশবপুর গ্রামে। আজ সোমবার সকালে মো. মোবারকের ঘরে বসে কথা হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, বিএম কনটেইনার ডিপো তাঁর জীবন পরিবর্তন করে দিয়েছিল। ২০১১ সালে বাড়ির পাশে বিএম কনটেইনার ডিপো স্থাপিত হলে তাঁর ছোট মুদিদোকানের ব্যবসা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এরপর একে একে ১০৫টি ভাড়া ঘর, ১টি রেস্তোরাঁ, ১টি মুদিদোকান ও ১০০ মানুষের একটি খাবারের মেস চালান তিনি। এসব প্রতিষ্ঠানে স্থায়ীভাবে আটজন মানুষের কর্মসংস্থানও করেছেন। এসব ব্যবসা থেকে সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে দুই লাখ টাকা লাভ হতো তাঁর। কিন্তু শনিবার রাতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের পর থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাঁর সব ব্যবসা।
মোবারক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সব ব্যবসা ছিল বিএম কনটেইনার ডিপোর শ্রমিক–কর্মচারীনির্ভর। বিস্ফোরণের পর থেকে সব ভাড়া ঘর খালি হয়ে গেছে। দোকানে বেচাবিক্রি তলানিতে ঠেকেছে। আমার ১২ লাখ টাকা ঋণের বিপরীতে প্রতি মাসের সুদ ৬৭ হাজার টাকা। এ ঋণ কী করে শোধ করব আমি! আমার সব শেষ হয়ে গেল।’
মোবারকের স্ত্রী সেলিনা আক্তার বলেন, ‘এক দুর্ঘটনায় হঠাৎ এমন দুর্দিন আসবে আমাদের জীবনে, তা কখনো ভাবিনি।’