এ যুগে এক টাকায় পোলাও বা ভাত, মাংস, ডাল—ভাবা যায়! তবে এই টোকেন মূল্যে খাবার বিক্রি করছেন পিরোজপুরের কয়েকজন। বিনা মূল্যে না দিয়ে নামমাত্র মূল্যে দরিদ্র ব্যক্তিদের মধ্যে খাবার বিক্রি করছেন তাঁরা।
পিরোজপুরে এর উদ্যোক্তা নাজমুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। নাজমুল ইসলাম বন্ধুদের নিয়ে পরিকল্পনা করেন প্রতি শুক্রবার দুপুরে সুবিধাবঞ্চিত ও পথশিশুদের অন্তত এক বেলা ভালো খাবারের ব্যবস্থা করার।
পরিকল্পনা অনুসারে, ২০ জন শিক্ষার্থী নিজেদের টাকায় প্রথম কার্যক্রমটি শুরু করেন। এরপর তাঁদের পাশে এসে সহায়তার হাত বাড়ান অনেকে।
পিরোজপুর শহরের মসজিদ মোড়ে নাজমুল ইসলামের দোকান। গতকাল শুক্রবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, দরিদ্র লোকজন ভিড় করে দুপুরের খাবারের প্যাকেট কিনছেন। প্যাকেটে ভাগ ভাগ করে গোছানো ছিল ভাত, মাংস আর ডাল।
নাজমুল ইসলাম জানান, গত ২২ মার্চ থেকে এক টাকার দুপুরের আহার কার্যক্রম শুরু করেন তাঁরা। প্রথম দিন ৫০ জনকে দুপুরে খাবার খাওয়ানো হয়েছে। পরের শুক্রবার এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪ জন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ৬০ জনকে দুপুরের খাবার খাওয়ানো হয়েছে। শহরের মসজিদ মোড়ে সড়কের পাশে খাবার বিতরণ করা হয়। দরিদ্র মানুষ এ খাবারকে যেন ভিক্ষাবৃত্তি মনে না করেন, সেই জন্য খাবারের মূল্য রাখা হয়েছে এক টাকা। যাতে তাঁরা মনে করেন, টাকা দিয়ে খাবার কিনে খেয়েছেন।
গতকাল জুমার নামাজের পর দেখা গেল, এক টাকায় খাবার কেনার জন্য সারি বেঁধে বসে আছেন লোকজন। বেলা পৌনে দুইটার দিকে খাবার বিক্রি শুরু হলে তাঁরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে এক টাকা দিয়ে খাবার কেনেন। এ সময় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ ও তাঁর স্ত্রী মিশু রহমান এসে এ কার্যক্রমে যোগ দেন।
হাসনাইন পারভেজ বলেন, ‘কয়েকজন তরুণ ও যুবকের দরিদ্র মানুষের মধ্যে এক টাকার বিনিময়ে দুপুরের খাবার বিতরণের উদ্যোগটি আমার ভালো লেগেছে। আমি আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেখানে গিয়ে উদ্যোগটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।’
পিরোজপুর সদর উপজেলার খানা কুনিয়ারি গ্রামের বিধবা সাহেরা বেগম (৭৫) ভিক্ষাবৃত্তি করেন। তিনি এক টাকা দিয়ে দুপুরের খাবার পেয়ে বলেন, তিনি ভিক্ষা করে খান। সারা দিন ভিক্ষা করে কখনো মানুষের দেওয়া খাবার খান। আবার কখনো রুটি কিনে খান। মাংস দিয়ে খুব একটা খাওয়া হয় না। এখানে এসে গত শুক্রবার এক টাকায় পোলাও–মাংস খেয়েছেন। এই শুক্রবার মাংস–ডাল দিয়ে ভাত খেয়েছেন। পেটপুরে খেতে পেরে ভালো লাগছে তাঁর।
এক টাকা দিয়ে মাংস–ভাত খেতে পেরে দারুণ খুশি পথশিশু রবিউল ইসলাম (১১)। সে জানায়, সারা দিন ঘুরে ঘুরে চেয়েচিন্তে মানুষের দেওয়া টাকায় খাবার খায়। রাতে শহরের গোপালকৃষ্ণ টাউন ক্লাব মাঠে বা মসজিদের পাশে ঘুমায়।
পিরোজপুর শহরের শিকারপুর মহল্লার বাসিন্দা শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহ আলম (৭০) বলেন, ভিক্ষা করে ভালো খাবার কেনা সম্ভব হয় না। এখানে এসে এক টাকা দিয়ে ভালো খাবার পেটপুরে খেতে পেরে তিনি খুশি।
এক টাকার খাবারের উদ্যোক্তা নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এই উদ্যোগে শহরের ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার মানুষ উৎসাহ দিচ্ছেন। কেউ কেউ সাধ্যমতো সহযোগিতা করছেন। শহরের নীরব (পুরোনো) হোটেলের বাবুর্চি আমাদের কম পারিশ্রমিকে রান্না করে দিচ্ছেন। ভবিষ্যতে আমাদের আরও বড় ধরনের পরিকল্পনা আছে।’