কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন চ্যানেলে এক জালে বড় আকারের ১৯৮টি লাল কোরাল মাছ ধরা পড়েছে। বাংলাদেশে এই মাছ কোরাল ও ভেটকি দুই নামেই পরিচিত। তবে চট্টগ্রামের স্থানীয় লোকজন এই মাছকে লাল পানসা, রাঙা ছইক্কা বা রাঙাচয় নামে চেনে। মাছগুলোর মোট ওজন হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৭ মণ। একেকটি মাছের ওজন সাড়ে তিন থেকে চার কেজি। এর মধ্যে ১৮০টি মাছ বিক্রির জন্য দাম হাঁকা হচ্ছে ৭ লাখ টাকা।
আজ বুধবার সকাল সাতটায় বঙ্গোপসাগরের সেন্ট মার্টিন চ্যানেলে মোহাম্মদ আইয়ুবের (৪৩) ট্রলার এফবি রিয়াজ থেকে ফেলা জালে ধরা পড়েছে মাছগুলো। বেলা ১১টায় ট্রলারভর্তি মাছ নিয়ে শাহপরীর দ্বীপ মিস্ত্রিপাড়া ফিশারিজ ঘাটে নামেন জেলেরা।
ট্রলারমালিক মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় শাহপরীর দ্বীপ মিস্ত্রিপাড়া ফিশারিজ ঘাট থেকে বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশে তাঁর এফবি রিয়াজ ট্রলারটি ছেড়ে যায়। ট্রলারচালক মোহাম্মদ সৈয়দ মাঝির নেতৃত্বে নয়জন মাঝিমাল্লা ছিলেন ট্রলারটিতে। সন্ধ্যায় সেন্ট মার্টিনে দ্বীপের উত্তর পাশে সেন্ট মার্টিন চ্যানেলে ট্রলারটি নোঙর করে জেলেরা জাল বসান। তাতেই লাল কোরালগুলো ধরা পড়ে।
সুস্বাদু কোরাল কিংবা ভেটকি মাছের কদর দেশব্যাপী। বঙ্গোপসাগরের গভীর জলের মাছ কোরাল সব সময় হাটবাজারে পাওয়া যায় না। এ জন্য এই মাছের দাম কিছুটা বেশি।
ট্রলারের চালক মোহাম্মদ সৈয়দ মাঝি বলেন, আজ সকাল সাতটায় চার থেকে পাঁচজন জেলে জাল তুলতে গিয়ে দেখেন, জাল টেনে তুলে আনা যাচ্ছে না। পরে ট্রলারে থাকা নয়জন মাঝিমাল্লার সবার সহায়তায় জাল তুলে দেখা যায়, বড় আকৃতির শতাধিক লাল কোরাল লাফালাফি করছে। হিসাব করে দেখা যায়, ১৯৮টি লাল কোরাল। প্রতিটি মাছের ওজন সাড়ে তিন থেকে চার কেজি, একত্রে ওজন প্রায় সাড়ে ১৭ মণ।
মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, ১৯৮টি মাছ থেকে ১৮টি রেখে দিয়ে বাকি ১৮০টি বিক্রি করা হবে। বাকি মাছের মধ্য থেকে ট্রলারের প্রতিটি জেলেকে একটি করে মাছ দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট মাছ আত্মীয়স্বজন ও নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করা হয়েছে। প্রথমে মাছগুলোর দাম হাঁকা হয় ৭ লাখ টাকা। স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী রহিম উল্লাহ, নবী হোসেন, আবদুল শুক্কুর ও আবদুল করিমসহ অনেকেই দর–কষাকষি করছেন। এখন মাছগুলো বরফ দিয়ে মিস্ত্রিপাড়া ফিশারিজে রাখা হয়েছে। উপযুক্ত দাম না পেলে মাছগুলো কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে নিয়ে বিক্রি করা হবে।
শাহপরীর দ্বীপ মিস্ত্রীপাড়া ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ বলেন, লাল কোরাল গভীর সমুদ্রের মাছ। সেন্ট মার্টিন চ্যানেলে এই লাল কোরাল মাছ ধরা পড়ার ঘটনা আলোড়ন ফেলেছে। অন্য জেলেরাও লাল কোরাল মাছ ধরতে সেন্ট মার্টিন চ্যানেলে জাল ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিছুদিন আগে সেন্ট মার্টিনের কাছাকাছি বরগুনার একটি ট্রলারের জেলেরা প্রচুর ইলিশ মাছ ধরেন।
টেকনাফ উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, সুস্বাদু কোরাল কিংবা ভেটকি মাছের কদর দেশব্যাপী। বঙ্গোপসাগরের গভীর জলের মাছ কোরাল সব সময় হাটবাজারে পাওয়া যায় না। এ জন্য এই মাছের দাম কিছুটা বেশি। মাছটি সাধারণত ১ থেকে ৯ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Lates calcarifer। এই মাছ উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চল বিশেষত পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দেখা যায়। তা ছাড়া এশিয়ার উত্তরাঞ্চল, কুইন্সল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চল এবং পূর্ব আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলেও এদের দেখা যায়।