নাসিরনগর–অষ্টগ্রাম সীমান্ত

এক ইটভাটায় এত ভোগান্তি

মেঘনার পাড়ের এোই ইটভাটার কারণে দক্ষিণ পাশে চর পড়েছে। বর্ষায় চরের কারণে পাশের শত বছর পুরোনো চকবাজারের ভাঙন সৃষ্টি হয়।

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের নোয়াগাঁও গ্রামে। সম্প্রতি তোলা ছবি
প্রথম আলো

পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই গড়ে ওঠা একটি ইটভাটা নিয়ে নানা সমস্যায় পড়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের চকবাজার এলাকার বাসিন্দারা। ইটভাটার ক্ষতিকর ধোঁয়ায় আশপাশের আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় লোকজন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ওই ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে গাছপালা ও ফসলি জমি।

স্থানীয় বাসিন্দারা আরও অভিযোগ করেন, মেঘনা নদীর পাড়ে অবস্থিত ইটভাটার কারণে দক্ষিণ পাশে জেগে উঠেছে চর। বর্ষাকালে চরের কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে পাশের শত বছর পুরোনো চকবাজারের ভাঙন সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দেওয়া হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

চাতলপাড় ইউনিয়নের চকবাজার এলাকাটি নাসিরনগরে পড়লেও ইটভাটাটি কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার মধ্যে। ইটভাটার সামনে জেগে ওঠা চরটি কোন উপজেলায় পড়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

কিশোরগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ রসায়নবিদ রুবায়েত সৌরভ প্রথম আলোকে বলেন, ওই ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় জোনাকী ইটভাটাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ এপ্রিল শুনানি শেষে ওই ইটভাটাকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

ভাটার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ ও নদীর ভাঙনের বিষয়টি উল্লেখ করে অষ্টগ্রামের বাঙ্গালপাড়ার নোয়াগাঁও গ্রামের আমিন মোল্লা কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্যের কাছে, জাহান মিয়া অষ্টগ্রামের ইউএনও কাছে, একই গ্রামের ইসলাম উদ্দিন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী, কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক, দুদক চেয়ারম্যান ও কিশোরগঞ্জের ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ এপ্রিলের মধ্যে তাঁরা এসব অভিযোগ করেন।

অভিযোগে বলা হয়, অষ্টগ্রামের নোয়াগাঁও গ্রামের জাহের মিয়া, জালাল মিয়া, ছায়েদ মিয়া, আমিরুল ইসলাম ও আফসার মিয়া এক যুগ ধরে খাসজমি দখল করে মেসার্স জোনাকী ব্রিকস ফিল্ড নামে ইটভাটা পরিচালনা করছেন। ভাটার এক কিলোমিটারের মধ্যে নাসিরনগর অংশে সাতটি এবং অষ্টগ্রাম অংশে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

ওই নিষিদ্ধ ইটভাটার বিষয়ে অষ্টগ্রামের ইউএনও হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে ১৩ মে চকবাজারের শতাধিক ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইটভাটা নিয়ে বিভিন্ন জয়গায় অভিযোগ দেওয়ায় ইসলাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে। আরেক অভিযোগকারী জাহান মিয়াসহ নয়জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দেওয়া হয়েছে।

ইটভাটার আরেক মালিক মো. জালাল মিয়া বলেন, ‘ইটভাটার পাশে জেগে ওঠা চরটি কাটতে নাসিরনগরের সংসদ সদস্যকে বলেন। আমরাও সহায়তা করব। আর ইটভাটা সরকারি খাস জায়গায় অবস্থিত না। আমরা স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে খাজনা দিচ্ছি।’