সময়টা ২০১৪ সাল। তত দিনে শিক্ষক জীবনের বেশ কিছু বছর কাটিয়ে দিয়েছেন সিত্তুন নাবিলা সিদ্দিকা। হঠাৎ একদিন ভাবলেন শিক্ষার্থীদের একটু বিশেষভাবে গড়ে তুললে কেমন হয়? সেই ভাবনা থেকেই ‘স্বপ্নের স্কুল গড়ি, নিজেকে দিয়ে শুরু করি’—স্লোগানে তিনি শুরু করেন মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া। এর বাইরে শিক্ষার্থীরা যেন ইংরেজি ভাষা ও বাংলা বানানে দক্ষ হয়ে ওঠে সে জন্য গড়ে তোলেন ক্লাব। শ্রেণিকক্ষটাও যেন পরিপাটি আর সাজানো গোছানো হয় সে দিকেও তাঁর নজর।
সিত্তুন নাবিলা সিদ্দিকা নগরের কদম মোবারক এমওয়াই (বালক-বালিকা) উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক। অন্য সহকর্মীদের কাছে তিনি এখন অনুসরণীয়। তাঁর ছোঁয়ায় শিক্ষার্থীরাও হয়ে উঠছে দক্ষ। এসব সৃজনশীলতার পুরস্কার পেলেন সিত্তুন নাবিলা সিদ্দিকা। বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে ইউনেসকো আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘এশিয়া প্যাসিফিক রিজওনাল ফোরামে’—দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে এসেছেন তিনি। ৭ ও ৮ অক্টোবর থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বসা এই সভায় বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষকদের মধ্যে একমাত্র তাঁকেই নির্বাচন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সভায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সফল তরুণ শিক্ষকের সঙ্গে নিজের অনুভূতি শেয়ার করেন তিনি। তবে সিত্তুন নাবিলা সিদ্দিকার জীবনে এটিই একমাত্র সাফল্য নয়। এই তো কিছুদিন আগে হয়েছেন জাতীয় পর্যায়ের দেশের সেরা ৪৩ জন সেরা কনটেন্ট নির্মাতার একজন। এর বাইরে সরকারি নানা সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত থেকেও পেয়েছেন সাফল্য।
শিক্ষার্থীদের এভাবে গড়ে তোলার বিষয়ে সিত্তুন নাবিলা সিদ্দিকা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তোলার স্বপ্ন দেখতাম সব সময়। তাই আগে নিজে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করি। এরপর আমার শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেটি ছড়িয়ে দিই। এর বাইরে তাদের ইংরেজি ভাষায় দক্ষ করে তোলা, বাংলা বানান শেখানোর বিষয়েও তালিম দেওয়া শুরু করি। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কয়েকজনকেও দক্ষ করে তুলেছি। তারা আমার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আলাদাভাবে সময় দিয়ে দক্ষ করে তোলার চেষ্টা করছি।’
সহকর্মী সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা ঝরল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবু জহুরের কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ে সিত্তুন নাবিলা সিদ্দিকার কর্মক্ষমতা অসাধারণ। সব সময় শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা দেখেছি তাঁর মধ্যে।’
স্বামী–সন্তান নিয়ে সুখের সংসার। তবে আজ যখন একের পর এক সাফল্য এসে ধরা দেয় তখন সিত্তুন নাবিলা সিদ্দিকার মনে পড়ে মা আর বাবাকে। এই দুটো মানুষের চাওয়াই যে তাঁকে শিক্ষকতা পেশায় নিয়ে এসেছিল। কিন্তু তাঁরা আজ বেঁচে নেই।
চাকরিজীবনের প্রথম সাক্ষাৎকার দেওয়ার দিনই হারান মাকে। এর দুই বছর পর বাবাকে। তাই সিত্তুন নাবিলা সিদ্দিকা বলেন, ‘আজ সব আছে। নেই শুধু বাবা-মা।’