‘একা হয়ে পড়েছি, নিজেকে কখনো এত শূন্য লাগেনি’

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলম। তাঁদের মধ্যে ১১ কর্মী আগুন নেভাতে গিয়ে পাঁচজন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে দুজন এখনো নিখোঁজ
ছবি: সংগৃহীত

‘সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুন নেভাতে যাওয়ার দুই ঘণ্টা আগেও এক কাপ চা দুই ভাগ করে দুজন খেয়েছি। এতটা কাছের ছিল নিপন। সেই নিপন আর বেঁচে নেই, বিশ্বাসই করতে পারছি না।’ কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলম।

সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন নেভাতে গিয়ে মারা যান ওই স্টেশনের টিম লিডার নিপন চাকমা। গতকাল রাতে নিপন চাকমার লাশ শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন নুরুল আলম। আজ সোমবার তাঁর সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি তাঁর শূন্যতার কথা প্রথম আলোকে জানান। নিপন চাকমার বাড়ি রাঙামাটি শহরের কলেজ গেটের মন্ত্রীপাড়া এলাকায়। নিপন চাকমার স্ত্রী ও দুই মেয়ে আছে।

নুরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, নিপন চাকমাসহ আরও পাঁচ কর্মীকে হারিয়েছেন তিনি। তাঁদের সঙ্গে তিনি এক বছর কাজ করেছেন। তাঁদের সঙ্গে বয়সের ব্যবধান বেশি হলেও আন্তরিকতা ও হৃদ্যতার কোনো কমতি ছিল না। নিজের সন্তানের মতো স্নেহ করতেন তাঁদের। কর্মীদের হারিয়ে বুকের ভেতরটা হাহাকার করছে নুরুল আলমের।

নুরুল আলম বলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমি এখন একা হয়ে পড়েছি। তারা আমার সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠভাবে থাকত, আমার কখনো নিজেকে এত শূন্য লাগেনি।’

নিপন চাকমা

ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, একটা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তার পরে টিম লিডারের কাছে নেতৃত্ব থাকে। সে জন্য স্টেশন কর্মকর্তার সঙ্গে ফায়ার ফাইটারের চেয়ে টিম লিডারের যোগাযোগ বেশি থাকে। নিপনের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ বেশি হতো।

নুরুল আলম বলেন, নিপন চাকমা এত ভদ্র ও নম্র ছিলেন যে সবাই তাঁকে পছন্দ করতেন। অনেক সময় নিপন কিংবা তিনি একটা চা ভাগ করে খেতেন। যখন কন্ট্রোল রুম থেকে কর্মীদের মৃত্যুর খবর পান, তিনি সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেলে যান। গতকাল রাতে নিপন ও ফায়ার কর্মী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর লাশ তাঁদের স্বজনদের কাছে তুলে দেন। আজ সকালে আরেক কর্মী রমজানুল ইসলামের লাশ তাঁর পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেন।

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস স্টেশন সূত্র জানায়, গত শনিবার সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের পর খবর পেয়ে সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ১১ কর্মী আগুন নেভাতে যান। তাঁদের মধ্যে ছয়জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। বাকি দুজন এখনো নিখোঁজ। নিখোঁজ দুজন হলেন মোহাম্মদ ফরিদউজ্জামান ও রবিউল ইসলাম।