গতকাল রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ওই অনুষ্ঠান চলাকালে আড্ডায় মেতেছেন অর্ধশত মুক্তিযোদ্ধা।
‘গুলি লেগে সান্টু ভাই পড়ে গেল। মানিক কীভাবে যে প্রাচীর টপকে পার হলো! ড্রেনের মধ্যে পড়ে গেল আবদুল ওয়াসেক লাল।’ বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার ইকবালের কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির কথা এভাবে বলেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফুল আলম।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ওই অনুষ্ঠান চলাকালে আড্ডায় মেতেছেন অর্ধশত মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের সবার হাতে রজনীগন্ধা ফুল। হাতে ফুল নিয়ে তাঁরা ৫০ বছর আগে ফিরে গেছেন। অনেক দিন পরে এক জায়গায় হয়ে তাঁরা এমন করে কথা বলছেন, যেন মুক্তিযুদ্ধ গতকালের ঘটনা। কাছাকাছি বসে একটি দলে আরও ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুণ অর রশিদ, মোরশেদ আলী, সারোয়ার-ই-কামাল, মজিবর রহমান, আবদুস সামাদ, শফিকুল ইসলাম প্রমুখ। আর একটু পেছনে বসে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলছিলেন বানেছা বেগম, সালেহা বেগম, রওশন আরা ও হোসনে আরা। এই নারীরা তাঁদের অসুস্থ স্বামীর পরিবর্তে সংবর্ধনা সভায় অংশ নিতে এসেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাহারুল ইসলাম বললেন, রাজশাহীর প্রতিরোধযুদ্ধে প্রথমে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর দুজন সদস্য মারা যায়। তিনি ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত পুরো প্রতিরোধযুদ্ধের কাহিনি শোনালেন। সারোয়ার-ই-কামাল বললেন, পাশের আমবাগান থেকে পাকিস্তানি হানাদারদের ওপর মুক্তিযোদ্ধারা গুলি চালিয়েছিলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল আলমের কথায় ফুটে উঠেছে স্বীকৃতি না পাওয়ার আক্ষেপটা। তিনি বললেন, বড়ই পরিতাপের বিষয় এই যে প্রথম প্রতিরোধযুদ্ধে রাজশাহীর লক্ষ্মীপুরে ১৬ জন ইপিআর সদস্য শহীদ হলেন। তাঁদের কথা কেউ কোথাও লিখে না। অপর বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাহারুল ইসলাম দুঃখ করে বললেন, রাজশাহী পুলিশ লাইনসের ভেতরে শত শত পুলিশ শহীদ হয়েছিলেন। স্বাধীনতা দিবসে সেখানে কেউ ফুল নিয়ে যায় না।
বীর মুক্তিযোদ্ধারা যখন এই আলাপচারিতায় মশগুল, তখন একাডেমি মিলনায়তনে ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান চলছিল। এতে নগরের ৫৫২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার মো. হুমায়ুন কবীর। সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আবদুল বাতেন, রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক, পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা জিনাতুন নেসা তালুকদার প্রমুখ।