গ্রামটির সড়কগুলো সুনসান নীরব। একটু এগোতেই চোখে পড়ল শত শত নারী-পুরুষ ও শিশু একটি বাড়িতে ভিড় জমিয়েছে। বাড়িটির ভেতরে ঢুকতেই কান্নার করুণ সুর কানে ভেসে এল। সামনেই দেখা মিলল সন্তানহারা মায়ের কান্নামাখা আহাজারি। ঘরের মধ্যে নিহত ব্যক্তির স্ত্রী-স্বজনদের কান্নার শব্দে বাতাস যেন ভারী হয়ে উঠেছে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে মা জরিনা খাতুনের আহাজারিতে উপস্থিত সবাই স্তব্ধ।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে আজগড়া গ্রামে জামাত আলী মোড় এলাকায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত পথচারী আবদুল জলিলের বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্যই চোখে পড়েছে। এ সময় বাড়িটির বারান্দায় নিহতে ব্যক্তির মা জরিনা খাতুন (৬২) কেঁদে কেঁদে আহাজারি করে বলেন, ‘আমরা এখন কোথায় যাব? আমার বাবাকে কারা মারল রে...।’
নিহত ব্যক্তির স্ত্রী তাসলিমা খাতুন (৩০) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, অনেক কষ্ট করে দুটি সন্তান ও বৃদ্ধ শাশুড়িকে নিয়েই জীবন চলে তাঁদের। নদীতে মাছ শিকার করে যেটুকু আয় হতো, তা দিয়েই কোনো রকমে চলে তাঁদের সংসার। করোনার কারণে মাঝেমধ্যে রিকশাভ্যানও চালাতেন তাঁর স্বামী।’ তাঁর স্বামীকে এভাবে কেন হত্যা করা হলো সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেন না। তবে যারাই হত্যা করুক, তার যেন বিচার হয় সেই দাবি জানান তিনি।
কথা হয় জলিলের শিশুসন্তান শক্তির সঙ্গে। ছোট বোন জ্যোতিকে কোলে নিয়ে অশ্রুভেজা চোখে শক্তি বলে, তার বাবা গতকাল বুধবার দুপুরে বাড়ি থেকে খেয়ে গেছেন। আর ফেরেননি। সে শুনেছে, তার বাবাকে কারা যেন মেরে ফেলেছে।
পরিবারটির শোকের সময়ে সমবেদনা জানাতে বাড়িটিতে এসেছেন গ্রামের শত শত নারী-পুরুষ। তবে কারও একটু সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষা জানা নেই। সেখানে উপস্থিত প্রতিবেশী সুফিয়া খাতুন বলেন, এই পরিবারটি ছিল অনেক অভাবগ্রস্ত। তবে বাইরের কারও কাছে কখনো হাত পাততে দেখেননি। এমন পরিবারে এই বিপদ দেখে তাঁরা হতভম্ব হয়ে গেছেন। পরিবারটির কেউ কখনো রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলে যাননি।
গ্রামের তরুণ সেলিম রেজা বলেন, জলিল একদম সহজ-সরল ও নিরীহ মানুষ ছিলেন। এই রকম মানুষকে যারা রাজনীতির নামে হত্যার করেছে, তাদের বিচার হতেই হবে। সেই সঙ্গে এই পরিবারটির প্রতি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
চৌহালীতে সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বুধবার বিকেলে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন আবদুল জলিল। সংঘর্ষের সময় তিনি পথচারী হিসেবে ওই এলাকা পার হচ্ছিলেন।
এনায়েতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান প্রথম অলোকে জানান, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে আটক করা হয়েছে। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য আজ সকালে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এখনো কোনো মামলা হয়নি। তবে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
চৌহালীতে সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বুধবার বিকেলে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন আবদুল জলিল। সংঘর্ষের সময় তিনি পথচারী হিসেবে ওই এলাকা পার হচ্ছিলেন। এই সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১০ জন। এ সময় চারটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গুরুতর আহত তিনজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।