একজন সম্মানিত লোককে টেনেহিঁচড়ে নামানো কমিশনের কাজ নয়

কুমিল্লা সিটি নির্বাচন উপলক্ষে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিয়ে ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দুই নির্বাচন কমিশনার। আজ দুপুরে নগরের নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লা–৬ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনকে চিঠি দেওয়ার পরও নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করা নিয়ে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানা বলেন, একজন সম্মানিত লোককে টেনেহিঁচড়ে নামানো কমিশনের কাজ নয়।

আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কুমিল্লা নগরের নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মিলনায়তনের বাইরে গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে রাশেদা সুলতানা এ কথা বলেন। এ সময় আরেক কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান উপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিনকে অবিলম্বে নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করার চিঠি দেয় কমিশন। তাঁর অনুসারী আরফানুল হক ওরফে রিফাত আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী। সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আরফানুল হকের পক্ষে নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিয়ে এক ব্রিফিং উপলক্ষে দুই নির্বাচন কমিশনার আজ সকালে কুমিল্লায় আসেন। প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিয়ে তাঁরা সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ব্রিফিং করেন। ব্রিফিং শেষে গণমাধ্যমকর্মীরা তাঁদের ঘিরে ধরেন।

এ সময় আহসান হাবিব খানের কাছে ‘কমিশনের চিঠির পরও কীভাবে সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন’ প্রশ্ন রাখা হয়। জবাবে তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোটে নির্বাচিত আপনি (সংসদ সদস্য)। এ ক্ষেত্রে আইনপ্রণেতা হয়ে আপনি নিজেই ব্যর্থ হলেন। এরপরে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনকে উদাহরণ হিসেবে নেবেন বাংলাদেশের মানুষ। যেখানে ভোটের পরিবেশ নেই, সেই কেন্দ্র বন্ধ হবে।’

একজন সংসদ সদস্যকে নিয়ে যদি নির্বাচন কমিশন পিছু হটে, ভবিষ্যতে ৩০০ সংসদ সদস্যকে নিয়ে কী করবেন—গণমাধ্যমকর্মীদের এই প্রশ্নের জবাবে রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘আইনি কাঠামো যেভাবে আছে, সেভাবে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। উনি (বাহাউদ্দিন) আইন মানেন না, আইনপ্রণেতা। আমাদের ব্যর্থ বলেন কেন আপনারা? একজন সম্মানিত লোককে টেনেহিঁচড়ে নামানো কমিশনের কাজ নয়।’

কুমিল্লা সিটি নির্বাচন উপলক্ষে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিয়ে ব্রিফিং করেন দুই নির্বাচন কমিশনার। আজ সকাল ১০টায় নগরের নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মিলনায়তনে

এ সময় পাল্টা প্রশ্ন রাখা হয়, এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের ইজ্জত গেছে কি না? জবাবে রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘যিনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেন তাঁর ইজ্জত কী? উনি চলে গেলে ভালো করতেন। নির্বাচন শেষ হওয়ার আগে কমিশনকে ব্যর্থ বলা ঠিক নয়।’

এর আগে সকাল ১০টায় প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিয়ে ব্রিফিং করেন দুই নির্বাচন কমিশনার। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে নগরের নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মিলনায়তনে এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইসি আহসান হাবিব খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসি রাশেদা সুলতানা। অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব (আইন) মো. মাহবুবার রহমান সরকার, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দুলাল তালুকদার, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ইভিএম প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

১৫ জুন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০। নারী ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার দুজন। মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোট হবে। এবার মেয়র পদে মোট প্রার্থী পাঁচজন।