টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের পুরোটাই যমুনা নদীর ভেতরে চরাঞ্চলে। কিন্তু ২৫ বছর ধরে এই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) অস্থায়ী কার্যালয় চলছে নদীর এপার (পূর্ব প্রান্তে) পার্শ্ববর্তী গোবিন্দাসী ইউনিয়নে। ফলে ইউপির সেবা পেতে নদী পারি দিয়ে গাবসারার বাসিন্দাদের যেতে হয় পাশের ইউনিয়ন গোবিন্দাসীতে। তাতে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয় চরবাসীর।
ইউপি সূত্র জানায়, গাবসারা ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডই যমুনার মধ্যে চরাঞ্চলে। ইউনিয়নটি অনেকটা দ্বীপের মতো। উপজেলা সদর থেকে এ ইউনিয়নে যেতে যমুনা নদী পারি দিতে হয়। ইউনিয়নে ৩০ সহস্রাধিক মানুষের বসবাস। ২৫ বছর আগে গাবসারার রামপুরে অবস্থিত ইউপি ভবন নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। তারপর ইউপির অস্থায়ী কার্যালয় নিয়ে আসা হয় যমুনার পূর্ব প্রান্তে গোবিন্দাসী বাজারের একটি ভাড়া করা টিনের ঘরে। সেই থেকে সেখানেই চলছে গাবসারা ইউপির দাপ্তরিক কার্যক্রম। ২০১১ সালে দেশের ইউপিগুলোতে ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্র খোলা হয়। গাবসারার তথ্যসেবাকেন্দ্রটিও সেই থেকে চলছে গোবিন্দাসীতে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নিজেদের এলাকায় ইউপি কার্যালয় না থাকায় তাঁদের খুব দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গাবসারা ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গোবিন্দাসী বাজারে ইউপি কার্যালয়ে যেতে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত নৌকা ভাড়া খরচ হয়। বর্ষা মৌসুমে নদী ভরা থাকায় যেকোনো ঘাট থেকে নৌকায় ওঠা যায়। কিন্তু শুকনা মৌসুমে রোদের মধ্যে চর পারি দিয়ে গিয়ে নৌকায় উঠতে হয়। তখন ভোগান্তির সীমা থাকে না।
গত রোববার দুপুরে গোবিন্দাসী বাজারে গাবসারা ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, একটি টিনের ঘরে ইউপির সাইনবোর্ড টাঙানো। ভেতরে একটি কক্ষে চারজন বসে কাজ করছেন। তাঁরা ইউপির কেউ নন। কৃষি বিভাগের মাঠকর্মী। প্রয়োজনীয় কিছু কাজ সেরে নিচ্ছেন পরিষদ ভবনে বসে। এ সময় গাবসারা থেকে আসেন আনজাদ আলী নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্যদের কেউ চরে, কেউ শহরে থাকেন। তাই নিয়মিত পরিষদে আসেন না। সভা বা বিশেষ কোনো প্রয়োজনে আসেন।
গোবিন্দাসী বাজারে কথা হয় গাবসারা ইউনিয়নের অধিবাসী শামছুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, পরিষদ কার্যালয় নিজেদের এলাকায় থাকলে মানুষের সেবা গ্রহণ সহজ হয়। তাই পরিষদ কার্যালয়টি গাবসারায় পুনরায় স্থানান্তর করা প্রয়োজন।
সেখানে বসে মুঠোফোনে কথা হয় ইউপির সচিব বিমল কান্তি দের সঙ্গে। তিনি দাবি করেন, তাঁরা নিয়মিত গোবিন্দাসীতে অফিস করেন। সেখান থেকেই গাবসারাবাসীদের বিভিন্ন সেবা দেওয়া হয়।
ইউপি সদস্য জুলমত আলী বলেন, তাঁর গ্রাম চরবিহারী থেকে নৌকায় নদী পার হয়ে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলযোগে তাঁকে ইউপি অফিসে যেতে হয়। অফিসে একবার যেতে–আসতে দেড় শ টাকা খরচ হয়ে যায়।
যোগাযোগ করলে ইউপি চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান বলেন, গাবসারা ইউনিয়ন প্রতিবছর ভাঙনের শিকার হয়। তাই ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এখানে পরিষদ ভবন বরাদ্দ দিতে উৎসাহী নন।
ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ জানান, ইউপি ভবন গাবসারা ইউনিয়নে স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক গাবসারায় ইউপি ভবন স্থাপনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যানকে স্থান নির্বাচনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।