সংস্কৃতি

উর্বশী পদক পেলেন চার গুণীজন

দোল উৎসব উপলক্ষে মণিপুরীদের বিশেষ অনুষ্ঠান ‘থাবল চোংবা’। বৃহস্পতিবার রাতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে রামনগর মনিপুরী পাড়ায়। ছবি: প্রথম আলো
দোল উৎসব উপলক্ষে মণিপুরীদের বিশেষ অনুষ্ঠান ‘থাবল চোংবা’। বৃহস্পতিবার রাতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে রামনগর মনিপুরী পাড়ায়।  ছবি: প্রথম আলো

উর্বশী আবৃত্তি পরিষদ সিলেটের ২৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেশের চারজন গুণীকে পদক দিয়ে সম্মাননা জানিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল শুক্রবার দুই দিনব্যাপী এই উৎসবের উদ্বোধনী দিনে তাঁদের এ সম্মাননা দেওয়া হয়। নগরের রিকাবীবাজার এলাকার কবি নজরুল অডিটরিয়ামে সন্ধ্যা সাতটায় এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়।

‘মৃত্তিকায় ছুঁয়ে যায় আমাদের কণ্ঠ আদিম সাম্যবাদী গানে’ স্লোগান নিয়ে আয়োজিত এ উৎসবে সহযোগিতা করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। পরে উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ। সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য গোলাম সারোয়ার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সদস্য শামসুল আলম সেলিম ও ছড়াকার বিধুভূষণ ভট্টাচার্য।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মোকাদ্দেস বাবুল। এ পর্বে সম্মাননা প্রদান করা হয় দেশের চারজন গুণী ব্যক্তিকে। তাঁরা হচ্ছেন আবৃত্তিতে রফিকুল ইসলাম ও ইকবাল খোরশেদ এবং সংগীতে বাউল আবদুর রহমান ও বিপ্রদাস ভট্টাচার্য্য। এরপর আবৃত্তি অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতেই উর্বশীর আবৃত্তিশিল্পীরা মহুয়ার পালা শীর্ষক একটি প্রযোজনা উপস্থাপন করেন।

উর্বশীর পরিবেশনার পরপরই একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য গোলাম সারোয়ার, রফিকুল ইসলাম ও ইকবাল খোরশেদ। আজ শনিবার ২৭ বছর পূর্তি উৎসবের সমাপণী দিনে সিলেটের বিভিন্ন আবৃত্তি সংগঠন ও আবৃত্তিকারেরা পরিবেশনায় অংশ নেবেন।

রবীন্দ্রভ্রমণের শতবর্ষ উদ্‌যাপন: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেটে এসেছিলেন ১৯১৯ সালে। সেই রবীন্দ্রভ্রমণের শতবর্ষ উপলক্ষে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সিলেট জেলা শাখা গতকাল ‘শ্রীহট্টে কবিগুরু’ শীর্ষক একটি স্মারক-সংকলনের প্রকাশনা অনুষ্ঠান করেছে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় নগরের কিনব্রিজ এলাকার সারদা হলসংলগ্ন সম্মিলিত নাট্য পরিষদের মহড়াকক্ষে এ অনুষ্ঠান হয়।

মণিপুরিদের থাবল চোংবা নৃত্য

বিকেল থেকেই বিভিন্ন রঙের কাগজ কেটে বাঁশ ও দড়ি দিয়ে মাঠ সাজানো হয়েছে। সন্ধ্যা নামার পরই একটি মাঠে জড়ো হাতে থাকেন মণিপুরি সম্প্রদায়ের তরুণ–তরুণীরা। মাঠের সাজানো অংশের মধ্যে বসে কয়েকজন তরুণ আপন মনে বাদ্যযন্ত্রে বের করছেন সুর ও তাল। সেই বাদ্যযন্ত্রের তালে মণিপুরিদের নিজস্ব পোশাক পরে তরুণ-তরুণীরা হাতে হাত ধরে শুরু করেন বিশেষ নৃত্য। মাঝখানের বাধ্যযন্ত্র নিয়ে বসা তরুণদের চারপাশে নেচে নেচে ঘুরছেন তাঁরা। এই নৃত্যকে মণিপুরিদের ভাষায় বলা হয় থাবল চোংবা। দোল উৎসব উপলক্ষে মণিপুরিদের বিশেষ একটি অনুষ্ঠান এটি। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মুগ্ধ চোখে বসে উপভোগ করেন দর্শকেরা।

গত বৃহস্পতিবার রাতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের রামনগর মণিপুরিপাড়ায় এই নৃত্য উৎসবে অংশ নিতে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে আসেন।

শ্রীমঙ্গল নাগরদোলা থিয়েটারের সভাপতি অনিরুদ্ধ সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, শ্রীমঙ্গলে মণিপুরি, খাসিয়া, গারোসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বসবাস। তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির অনুষ্ঠান দিন দিন কমে যাচ্ছে। সেগুলো যাতে হারিয়ে না যায় সে জন্য তাদের নিজেদের কাজ করতে হবে। পাশাপাশি সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।