শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়

উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকের পর ছাত্রীরা আবারও আন্দোলনে

সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন লিজার তাৎক্ষণিক পদত্যাগ চেয়ে স্লোগান দিতে দেখা গেছে ছাত্রীদের। আজ দুপুরে শাবিপ্রবির উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে
ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) একটি আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের একটি প্রতিনিধিদল। ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে বেলা একটার দিকে উপাচার্য কার্যালয় থেকে বের হয়ে ওই শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। তাঁরা পুনরায় উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।

আজ শুক্রবার বেলা তিনটা পর্যন্ত উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এনে তাঁর পদত্যাগ চেয়ে স্লোগান দিতে দেখা গেছে ছাত্রীদের। পাশাপাশি হলের যাবতীয় সমস্যা দ্রুত দূর করারও দাবি জানান।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এনে ছাত্রীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রীরা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় ছাত্রীরা হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ এবং সবাইকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার দুই দফা দাবি উত্থাপন করেন।

এরই অংশ হিসেবে আজ দুপুর ১২টা থেকে আন্দোলনরত ছাত্রীদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে উপাচার্য বৈঠক করেন। বৈঠকে ছাত্রীদের প্রতিনিধিদল উপাচার্যের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ উত্থাপন করে তিন দফা দাবি তুলে ধরে। দাবিগুলো হলো সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ, অবিলম্বে হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা দূর করে সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং অবিলম্বে ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ কমিটি নিয়োগ।

উপাচার্য এক মাসের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও ছাত্রীরা দাবি করছেন বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি

ছাত্রীদের অভিযোগ, ছোট-বড় কোনো সমস্যাতেই প্রাধ্যক্ষ জাফরিন লিজা দায়িত্ব নিতে চান না। বরং তিনি ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। কোনো সমস্যা নিয়ে গেলেই তিনি সিট বাতিলের হুমকি দেন। পরিবারের আর্থসামাজিক অবস্থা নিয়েও তিনি ছাত্রীদের হয়রানি করেন বলে তাঁরা দাবি করেন।

লিখিত অভিযোগে শিক্ষার্থীরা হলের খাবারের মান বাড়ানোর পাশাপাশি দাম কমানোর দাবিও জানিয়েছেন। তাঁরা হলের ভাড়া কিস্তিতে পরিশোধের দাবিও জানান। অভিভাবকদের হলের ভেতরে যাওয়ার অনুমতি প্রদান না করা, খাবার পানির সংকট, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর স্বল্পতা, কাজে চরম অবহেলাসহ ছাত্রীরা হলের বেশ কিছু সমস্যার ব্যাপারে উপাচার্যকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জাফরিন লিজা প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রীরা অতিরঞ্জিতভাবে বিষয়গুলোর বর্ণনা দিচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গে কোনো ধরনের অশোভন আচরণের ঘটনা ঘটেনি। হলে খাবারের মান ও থাকার পরিবেশও খুব ভালো বলে তিনি দাবি করেন।

উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেওয়া এক ছাত্রী বলেন, উপাচার্য এক মাসের সময় চেয়েছেন। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় তিনি এখনই নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। বৈঠক শেষে বাইরে এসে এ সিদ্ধান্তের কথা সাধারণ ছাত্রীদের জানানো হলে তাঁরা সেটা প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রাধ্যক্ষ অপসারণ না হলে ছাত্রীরা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করবেন না।

জানতে চাইলে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রীদের প্রতিনিধিদলের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। তাঁদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। এক মাসের মধ্যে তাঁদের দাবিগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধান করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে কিছু বামপন্থী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের প্রভাবে ছাত্রীরা আবার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন। এটা দুঃখজনক।