পাবনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

উপাচার্যের কাছে ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ার অডিও নিয়ে তোলপাড়

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যাল
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যাল

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে এক চাকরিপ্রার্থী ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ার একটি অডিও নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রেকর্ডটি ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে এই ঘটনায় রাতেই উপাচার্য এম রোস্তম আলী ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাবনা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর পাবনা থেকে প্রকাশিত কিছু স্থানীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ঘটনাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে নিন্দা প্রকাশ করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে তিনটি প্রভাষক পদের জন্য নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষায় ২৮ জন প্রার্থী অংশ নেন। এরপর দুপুরে তাঁদের মধ্য থেকে ছয় প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ বলে তালিকা প্রকাশ করা হয়। এই তালিকা থেকে বাদ পড়াদের মধ্যে একজন হলেন কুমিল্লা সদরের কৃষ্ণনগর গ্রামের মনিরুল ইসলাম। তালিকায় নিজের নাম না দেখেই তিনি উত্তেজিত হতে শুরু করেন। বেলা আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এসে হাজির হন মনিরুল। এ সময় উপাচার্য কার্যালয় থেকে বের হতে গেলে তিনি তাঁর পথ আগলে ধরেন। এ সময় তিনি উপাচার্যের কাছে চাকরির জন্য ঘুষ হিসেবে দেওয়া টাকা ফেরত চান। মনিরুল উপাচার্যকে বলেন, চাকরি পাওয়ার জন্য বাবার জমি বিক্রি করে দুই দফায় তাঁকে (উপাচার্য) ৮ লাখ টাকা দিয়েছেন তিনি। চাকরি যেহেতু পান নাই, তাই টাকা ফেরত চান।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, ওই ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে আসেন। তখন উপাচার্য ওই চাকরিপ্রার্থীকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এরপর রাতেই উপাচার্যের কাছে চাকরিপ্রার্থীর টাকা চাওয়ার ওই কথাগুলোর একটি অডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

যোগাযোগ করা হলে মনিরুল ইসলাম দাবি করেন, চাকরির জন্য আবেদন করার পর থেকে তিনি কয়েক দফা উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। উপাচার্য চাকরির জন্য তাঁর কাছে ১২ লাখ টাকা চেয়েছিলেন। এরপর দুই দফায় তিনি ঢাকায় উপাচার্যের রেস্ট হাউসে দেখা করেছেন। তিনি বাবার জমি বিক্রি করে একবার ৫ লাখ ও পরেরবার ৩ লাখ টাকা দিয়েছেন। চাকরি পাওয়ার পর বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল।

মনিরুল ইসলামের ভাষ্য, পরীক্ষার আগের রাতেও তিনি উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছেন। তখন তিনি চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু সকালে পরীক্ষা দিতে এসে তিনি বুঝতে পারেন, নিয়োগ আগেই ঠিক হয়ে আছে। পরে তালিকা প্রকাশের পর তিনি বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে উপাচার্যের কাছে টাকা ফেরত চান।

এদিকে রাতে বিষয়টি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাতেই উপাচার্য পাবনা সদর থানায় মনিরুলের বিরুদ্ধে একটি জিডি করেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পক্ষে উপপরিচালক ফারুক হোসেন চৌধুরী স্থানীয় পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেন।

বিজ্ঞাপনে ফারুক হোসেন চৌধুরী দাবি করেন, উপাচার্যের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অডিওটি তৈরি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হতে পেরে ওই প্রার্থী প্রশাসন ভবনের সামনে এসে উপাচার্যকে গালিগালাজ করেছেন। সেই সঙ্গে বিষয়টি গোপনে ধারণ করে প্রকাশ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে উপাচার্য এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য এবং কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হাবিবুল্লাহ বলেন, নীতিমালা মেনেই নিয়োগ বোর্ড সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে কারা নিয়োগ পাবেন, সে বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় রিজেন্ট বোর্ড এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে।

ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে উপাচার্য এম রোস্তম আলী বলেন, ‘নিয়োগ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া ওই চাকরিপ্রার্থী এমন অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বিভিন্ন সুপারিশ নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তবে তাঁর সঙ্গে কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি।’