শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়

উপাচার্যকে মুক্ত করতে গিয়ে শিক্ষার্থী–পুলিশ সংঘর্ষ, আহত অন্তত ২০

পুলিশ লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আজ রোববার সন্ধ্যায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযু‌ক্তি বিশ্ববিদ‌্যালয়ের আইসি‌টি ভবনের ফটকে
ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ থাকা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদসহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পুলিশ মুক্ত করতে গেলে আজ রোববার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২০ শিক্ষার্থী ও পুলিশ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

শিক্ষার্থী, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে শিক্ষক সমিতির নেতারা ও প্রক্টরিয়াল বডি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে আসেন। এ সময় কোষাধ্যক্ষ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বলেন, ভেতরে অবরুদ্ধ থাকায় উপাচার্য অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁকে বাসায় নিয়ে যেতে হবে। তখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। এ সময় শিক্ষকদের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে প্রবেশ করে অবরুদ্ধ উপাচার্যকে মুক্ত করতে যান। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুলিশকে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেন। এর জেরে ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করেন। তখন শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। এতে কিছু সময়ের জন্য পুলিশ পিছু হটলেও একটু পরই সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর পুলিশ আইসিটি ভবনে প্রবেশ করে উপাচার্যকে উদ্ধার করে তাঁর বাসভবনে নিয়ে যায়।

সংঘর্ষে অন্তত ২০ শিক্ষার্থী ও পুলিশ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে

ঘটনাস্থলে থাকা সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে দাবি করেছেন, পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়নি। ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বোঝাতে গিয়েছিলেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাঁদের ওপর চড়াও হয়েছেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের পেছনে অবস্থান নিয়েছিল। শিক্ষার্থীরা একপর্যায়ে পুলিশের ওপর চড়াও হন। তাঁরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলাও চালান। এতে তিনিসহ পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হন। তাই পুলিশ জানমাল রক্ষার্থে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে। বর্তমানে পুলিশ ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

এর আগে আজ বেলা পৌনে তিনটার দিকে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ করে রাখেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য তাঁর কার্যালয় থেকে বের হয়ে ডিনদের এক সভায় যাওয়ার সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে পড়লে তাঁর সঙ্গে থাকা শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাঁকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে আশ্রয় নেন। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ওই ভবনের প্রধান ফটক অবরুদ্ধ করে স্লোগান দিতে শুরু করেন।

এর আগে আজ সকাল পৌনে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের অর্ধশতাধিক ছাত্রী তিন দফা দাবিতে গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ প্রধান রাস্তা ‘কিলো সড়ক’ অবরোধ করে তিন দফা দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ চেয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে অনেক ছাত্রী অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী এ আন্দোলনে যোগ দেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের ক্লাস–পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ, হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা দূর করে সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত এবং ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ কমিটি নিয়োগের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলন করছেন হলের ছাত্রীরা।