করোনাকালে দিনমজুর রফিকুল ইসলামের কোনো কাজ নেই। ছেলে ঈদ উপহারসামগ্রী পাবে শুনে সঙ্গে এসেছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালায়। ছেলের পক্ষে উপহারসামগ্রীর প্যাকেট হাতে নেওয়ার সময় তাঁর চোখে ছিল খুশির ঝিলিক। এ যেন আগাম ঈদের খুশি।
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও সামিট গ্রুপের সহযোগিতায় নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালা মাঠে আজ শনিবার শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করা হয়। বেলা ১১টার দিকে এই অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়া মারিয়া পেরেরা। এ ছাড়া পাঠশালার প্রধান শিক্ষক নূর আলম, সহকারী প্রধান শিক্ষক রাজিত দাসসহ অন্যান্য শিক্ষক ও অভিভাবকেরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রথম আলোর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ইউএনও বলেন, এসব উদ্যোগের মাধ্যমেই বোঝা যায়, সত্যিই প্রথম আলো সংবাদপত্রের চেয়ে একটু বেশি কাজ করে। তারা দুঃসময়ে দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ায়। তিনি শিক্ষার্থীদের করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য উপদেশ দেন। অভিভাবক ও শিক্ষকদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকার জন্য আহ্বান জানান।
দিনমজুর রফিকুল ইসলামের ছেলে বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। রফিকুল বলেন, এই করোনা পরিস্থিতিতে গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালা থেকে তাঁর সন্তান তৃতীয়বারের মতো ত্রাণসামগ্রী পেল। তিনি বলেন, একজন দিনমজুর হিসেবে তাঁদের দিন এনে দিন খাওয়ার অবস্থা। সেই দৈনিক রোজগারও এখন প্রায় বন্ধ। করোনার কারণে তিনি প্রায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। রোজগার না থাকায় সংসার চালানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। এমন দুঃসময়ে ঈদ উপহারসামগ্রী পেয়ে এত দুঃখের মাঝেও যেন মনটা ভালো হয়ে গেল।
এই আলোর পাঠশালায় বেশ কিছু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী রয়েছে। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শুভ দাস। সে বলে, ‘ঈদে প্রতিবেশী মুসলিম বন্ধুদের বাড়িতে ভালো খাবারের আয়োজন করা হয়। তারা খুব আনন্দ করে। এ সময় আমাদেরও ভালো কিছু খেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু আমার বাবা খুব গরিব। অন্যের জমিতে কাজ করে। বাবার এক দিন কাজ না হলে আমাদের খুব কষ্ট হয়। ইচ্ছে করলেও বাড়িতে কোনো ভালো রান্না হয় না। সেখানে পোলাও চাল, ভাতের চাল, তেল, সেমাই, চিনি পাওয়া গেল। এবার ঈদে আমাদের বাড়িতেও মজা হবে।’
পাঠশালার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফোহাদ বাবু বলে, ‘আমরা দুই ভাই। আমার বাবা নেই। মা কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছেন। করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের বাড়িতে ঈদের কোনো আয়োজন হয় না। পাঠশালা থেকে উপহার পেয়ে খুব খুশি লাগছে।’