ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সুযোগসন্ধানী-অনুপ্রবেশকারী, মাদক ব্যবসায়ী ও অপরিচিত ব্যক্তিদের কমিটিতে রাখা হয়েছে বলে জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে গত বুধবার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদের সঙ্গে ঠাকুরগাঁও সার্কিট হাউসে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আলোচনায় বসেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৫ নভেম্বর বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, জেলা সভাপতি দবিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। ওই সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী সভাপতি ও সফিকুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মু. সাদেক কুরাইশী। কিন্তু মোহাম্মদ আলী ও সফিকুল ভাই হওয়ার অজুহাতে সম্মেলনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির পরামর্শে ওই কমিটি বাতিল করা হয়।
কমিটি বাতিলের ১০ মাস পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ আলী সভাপতি ও আবু হাসনাতকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৭ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে জেলা আওয়ামী লীগ।
ওই আংশিক কমিটি ঘোষণার পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর দলের ত্যাগী ও জ্যৈষ্ঠ নেতা–কর্মীদের বাইরে রেখে সুযোগসন্ধানী, অনুপ্রবেশকারী, মাদক ব্যবসায়ীদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। নেতা-কর্মীদের অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে বুধবার ঠাকুরগাঁও আসেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা আবু সাঈদ আল মাহমুদ। ঠাকুরগাঁও সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত ওই আলোচনায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
‘এ কমিটি জেলা কমিটির মনগড়া কমিটি হয়েছে। দলের ত্যাগী-পরীক্ষিত ও জ্যৈষ্ঠ নেতা-কর্মীদের বাইরে রেখে বিতর্কিত, অনুপ্রবেশকারীদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। আমরা ওয়ার্ড পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সরাসরি ভোটে নেতৃত্ব পেয়েছি। আর উপজেলায় কোনো কাউন্সিল ছাড়া বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে পকেট কমিটি করে ঘোষণা দেবে, তা হতে পারে না।’আবদুল মজিদ, সভাপতি, বড়বাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ
নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছোট পলাশবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা অভয় কুমার রায় ১৯৯১ সালে উপজেলার দুওসুও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর তিনি নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। তৎকালীন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুস সোবহান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অভয় কুমার রায় একজন সুযোগসন্ধানী ব্যক্তি। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর এলাকার হাটগুলোর ইজারার সুযোগ নিতে তিনি বিএনপি করতে শুরু করেন। কমিটির আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আল মনসুর মাদক ও গাছ চুরির মামলার আসামি। বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসিবুল হক প্রধান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মাজেদুর রহমান উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। ঘোষিত কমিটিতে তাঁকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী মিয়াকে ঘোষিত কমিটির উপদপ্তর সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়েছে, যা দলের নিয়মনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। বিষয়টি উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আসলাম জুয়েল ও ছাত্রলীগের সভাপতি মোমিনুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মু. সাদেক কুরাইশী বলেন, ঘোষিত কমিটি সবার মতামত নিয়েই করা হয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, অনুসন্ধান করে তাঁদের কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার সুযোগ আছে। এটা নিয়ে দলের ভেতর সমস্যা সৃষ্টির চেষ্টা ঠিক নয়।