দুটি নতুন তরমুজের জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বিজ্ঞানীরা। নামকরণ করা হয়েছে বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২। দেশীয় আবহাওয়া উপযোগী এসব তরমুজ সারা বছরই চাষ করা যাবে। দেশেই বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা যাবে এই জাত দুটির। একটি জাতের তরমুজের ভেতর হবে হলুদ, অন্যটির টকটকে লাল।
বারির মহাপরিচালক মো. নাজিরুল ইসলাম জানান, জাত দুটির অনুমোদনের জন্য কয়েক দিনের মধ্যে জাতীয় বীজ বোর্ডে আবেদন করা হবে। পেটেন্ট অনুমোদন পেলেই মাঠপর্যায়ে কৃষকদের মধ্যে সারা বছর চাষ ও বীজ সংরক্ষণ করা যায়, এমন জাত দুটি পৌঁছে দেওয়া হবে।
বারির সবজি বিভাগ এবং আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র লেবুখালী পটুয়াখালীর যৌথ উদ্যোগে এ দুটি জাত উদ্ভাবন করা হয়।
২০১৩ সাল থেকে এ নিয়ে কাজ শুরু হয়। এই গবেষণা দলে ছিলেন ছয়জন। নেতৃত্ব দিয়েছেন বারির সবজি বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফেরদৌসী ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে মৌসুমি তরমুজের চাষ হয় নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। এর ৮০-৯০ দিনের মধ্যে তরমুজ খাবারের উপযোগী হয়। এ জাতটি যখন অবমুক্ত হবে তখন কৃষক লাভবান হবে। কারণ এটি শতভাগ নিজস্ব আবহাওয়া উপযোগী জাত।
আজ সোমবার গাজীপুরে বারিতে এ দুটি জাতের গবেষণা মাঠ পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার এবং বারির মহাপরিচালক মো. নাজিরুল ইসলাম। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বারির পরিচালক (গবেষণা) মো. মিয়ারুদ্দীন, পরিচালক (পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন) মো. কামরুল হাসান, পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ) মুহাম্মদ সামসুল আলম, সবজি বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফেরদৌসী ইসলাম, জাত উদ্ভাবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীসহ বিভিন্ন বিভাগের বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তারা।
জাত উদ্ভাবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বারির বিজ্ঞানীরা জানান, আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালে যেসব উন্নত মানের তরমুজ পাওয়া যায়, তার প্রায় সবই জাপান বা অন্যান্য দেশ, যেমন চীন, থাইল্যান্ড, ভারত থেকে আমদানি করা সংকর জাতের বীজ থেকে উৎপাদন করা হয়।
ফলে তরমুজের বীজ আমদানি বাবদ প্রতিবছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হয়। এ ছাড়া এসব জাতের বীজের বিশুদ্ধতা ও অঙ্কুরোদ্গমের হার সব সময় ঠিক না থাকায় কৃষকেরা প্রতারিত হয়ে থাকেন। কিন্তু বারি উদ্ভাবিত জাত দুটি থেকে কৃষক নিজেই বীজ উৎপাদন করতে পারবেন। এগুলোর ফলন, আকৃতি, স্বাদ ও মিষ্টতা প্রচলিত জাপানি সংকর জাতের চেয়ে উন্নততর।
পটুয়াখালীর লেবুখালীর আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইফতেখার মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, বহু বছর আগে বারি উৎপাদিত দেশি তরমুজচাষিরা চাষ করছেন। এখন সেটি প্রায় হারিয়ে গেছে। কৃষকেরা এখন তরমুজের হাইব্রিড জাতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। তবে এখন থেকে নতুন জাত দুটি সারা বছর চাষ করা যাবে। প্রতিটির ওজন হবে কমপক্ষে তিন-চার কেজি। কৃষক নিজেই বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন।