নেত্রকোনার মগড়া সেতু নির্মাণ শেষে সাত মাস আগে উদ্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু সেতু নির্মাণের সময় দুই পাশে বিকল্প পথ তৈরি করতে নদীতে যে মাটির বাঁধ দেওয়া হয়েছিল, তা এখনো সরানো হয়নি। এতে নদীর গতিপথ হুমকির মুখে রয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দিলেও কাজ হচ্ছে না।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ঠিকাদারের গাফিলতি ও সেতুর তদারকির দায়িত্বে থাকা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তাদের উদাসীনতার জন্যই এমনটি হচ্ছে।
সওজ বিভাগের নেত্রকোনা কার্যালয় ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মগড়া সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৭২ দশমিক ৬ মিটার এবং প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ পায় মেসার্স রিজভী কনস্ট্রাকশন নামের ময়মনসিংহের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি থেকে সেতুর কাজ শুরু করে একই বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসে শুধু সেতুর দুই পাশে বিকল্প পথ তৈরি করে কাজ বন্ধ রাখা হয়। এরপর পুরোনো সেতুটি ভাঙার কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। মূল সেতুর কাজ শেষ করে উদ্বোধন করা হয় অন্তত সাত মাস আগে। সেতুটি নির্মাণে নকশায় ত্রুটি হওয়ায় পুরোনো সেতুটির তুলনায় অনেকটাই নিচু হয়েছে। ফলে বর্ষায় নৌচলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে।
সেতুর দুই পাশে নদীতে বিকল্প পথ তৈরি করতে যে মাটি, ইট, পাথরসহ বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছিল, তা এখনো সম্পূর্ণরূপে সরানো হচ্ছে না। এ নিয়ে শহরের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, স্মারকলিপিসহ নানা কর্মসূচি পালন করলেও কাজ হচ্ছে না। সর্বশেষ গত ২৪ মার্চ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জনউদ্যোগ মানববন্ধন করে।
এদিকে দ্রুত নদী থেকে মাটিসহ ওই সব উপকরণ অপসারণ করা না হলে এবারের বর্ষায় নদীর গতিপথ বাধাপ্রাপ্ত হবে। এরই মধ্যে কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নদীতে পানি জমতে শুরু করছে।
শহরের মোক্তারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আনিছুর রহমান বলেন, ‘শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীটির ওপর সেতুটি নির্মাণের সময় যে বিকল্প সড়ক করা হয়েছিল, সেই সড়কের মাটি এখনো সম্পূর্ণভাবে অপসারণ করা হচ্ছে না। আমরা আন্দোলন করলে কয়েক দিন পর ঠিকাদারের লোকজন এসে ঢিমেতালে কিছু মাটি সরিয়ে যায়।’
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জনউদ্যোগের আহ্বায়ক কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘সওজ কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণেই এমনটি হয়েছে। আমাদের সুন্দরতম ছোট এই শহরটিকে মগড়া নদী ঘিরে রেখেছে। নদীর মধ্য থেকে দ্রুত মাটি না সরানো হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’
সুজন জেলা কমিটির সভাপতি শ্যামলেন্দু পাল বলেন, ‘সওজ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুবই ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। জবাবদিহি থাকলে এমনটি হতো না। একদিকে একসময়ের প্রাণচঞ্চল এই মগড়া নদী দখল-দূষণে অতিষ্ঠ; অন্যদিকে এখন সেতু তৈরির পর বিকল্প সেতুর মাটি অপসারণ না করায় নদীটি আরও নাব্যতা হারানোর পথে।’
এ নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিজভী কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী হোসাইন আহম্মেদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
জানতে চাইলে সওজের নেত্রকোনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম তরফদার বলেন, ‘নদী থেকে মাটি সরানোর কাজ চলছে। আশা করা যাচ্ছে, এক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হবে।’