রাজধানীর উত্তরার ১৬ নম্বর সেক্টরের বৌদ্ধমন্দিরের পাশের একটি খাল থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার তুরাগ থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে এসব অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে।
পুলিশ বলছে, সারা দেশে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানের কারণে সন্ত্রাসীরা ভয়ে এগুলো ফেলে রেখে গেছে। এই অস্ত্রগুলো আনার পেছনে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় চক্রান্ত থাকতে পারে বলেও মনে করছে তারা।
উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও গুলির মধ্যে রয়েছে ৯৫টি ৭.৬২ বোরের পিস্তল, দুটি নাইন এমএম পিস্তল, ১০৬০টি গুলি (এর মধ্যে ৭.৬২ বোরের গুলি ২২০টি ও নাইন এমএম পিস্তলের গুলি ৮৪০টি), ৪৬২টি ম্যাগাজিন (৭.৬২ বোরের ১৮৯টি, এসএমজির ২৬৩টি ও গ্লোক পিস্তলের ১০টি), ১০টি বেয়নেট ও গুলি বানানোর ছাঁচ ১০৪টি। সাতটি ট্রাভেল ব্যাগের মধ্যে এগুলো ছিল।
রাত সাড়ে দশটায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি রাতের বেলা উদ্ধার অভিযান স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া পুলিশকে পুরো এলাকাটি ঘিরে রাখা এবং খালটিতে দিনে ভালোভাবে তল্লাশি চালানোর নির্দেশও দেন তিনি। পরিদর্শন শেষে ডিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, চলমান অভিযানের ফলশ্রুতিতেই সন্ত্রাসীরা অবস্থা বেগতিক দেখে নির্জন এলাকায় অস্ত্র ফেলে গেছে। তিনি বলেন, যারা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ করতে চায়, জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চায়, তারাই এসব করছে। এই অস্ত্রের মালিক কারা, কারা প্রশ্রয়দাতা, নতুন চালান আসছে কি না—এসব বিষয় তদন্ত করে বের করা হবে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্মকর্তা মাহমুদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা ও গাজীপুরের আটটি ইউনিট উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। ১১ জন ডুবুরি পানিতে তল্লাশি চালান। খালটির দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটার এবং গড় গভীরতা প্রায় নয় ফুট।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বেলা তিনটার দিকে পুলিশের এক কনস্টেবল পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরের বেড়িবাঁধ লাগোয়া দিয়াবাড়ী এলাকার এই খালপাড়ে বেড়াতে যান। এ সময় সেখানে একটি নম্বরবিহীন কালো জিপ দেখতে পান। জিপটির আশপাশে কয়েকজনের গতিবিধি দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। বিষয়টি তিনি তুরাগ থানার পুলিশকে জানান। পরে পুলিশের একটি দল বিকেল চারটার দিকে সেখানে পৌঁছায়। সেখান থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় অস্ত্র ও গুলিভর্তি সাতটি ট্রাভেল ব্যাগ উদ্ধার করা হয়।
মাসুদুর রহমান বলেন, পানির নিচে আরও অস্ত্র ও গুলি আছে কি না, তা খোঁজার জন্যই তাঁরা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদের সাহায্য নেন। তবে ডুবুরিরা কোনো অস্ত্র পাননি।
মিরপুর বেড়িবাঁধ দিয়ে আশুলিয়া যাওয়ার পথে দিয়াবাড়ী এলাকায় হাতের ডান পাশে খালটি। রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরের ভেতরে পড়েছে খালটি। এর পাশেই বড় সড়ক। সড়কের অন্য পাশে তুরাগ নদ। খালটি যে পাশে, সে পাশে কোনো লোকালয় নেই। স্থানটি একেবারেই নির্জন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলের চারপাশ ঘেরাও করে রেখেছেন। গণমাধ্যমের কাউকে এর আশপাশে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। ঘটনাস্থলে র্যাব, এপিবিএন ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের দেখা যায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার বিধান ত্রিপুরা বলেন, সারা দেশে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানের কারণে কেউ ভয়ে অস্ত্রগুলো ফেলে রেখে চলে গেছে বলে তাঁরা ধারণা করছেন। তবে এর সঙ্গে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত থাকতে পারে। বড় ধরনের কোনো নাশকতার পরিকল্পনা ছিল। অস্ত্রগুলো উদ্ধারের কারণে সেই পরিকল্পনা বানচাল করা সম্ভব হয়েছে।
অস্ত্রগুলো সম্পর্কে বিধান ত্রিপুরা বলেন, এগুলোর গায়ে উৎপাদনকারী দেশের নাম উল্লেখ নেই। তবে অস্ত্রগুলো নতুন। এখনো ব্যবহার করা হয়নি।
পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিনে-দুপুরে কীভাবে এত অস্ত্র ওই জায়গায় ফেলে যাওয়া সম্ভব হলো জানতে চাইলে উপকমিশনার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।