শরীয়তপুরের জাজিরার পদ্মা নদীর চরে জন্ম নেওয়া নবজাতক ‘পদ্মা’ মা–বাবার সঙ্গে গ্রামের বাড়ি ফিরেছে। জাজিরা উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় গতকাল সোমবার রাতে তারা বরগুনা সদরের আমতলী গ্রামে পৌঁছায়। তাদের ঘিরে গ্রামজুড়ে আনন্দ বিরাজ করছে।
পরিবার নিয়ে ঢাকার লালবাগে থাকেন মো. নহিদ মিয়া ও সুরমা আক্তার দম্পতি। প্রসবকালে মায়ের কাছে থাকার জন্য ঈদের আগেই বরগুনার আমতলী যাওয়ার জন্য স্বামীর সঙ্গে বের হয়েছিলেন অন্তঃসত্ত্বা সুরমা। দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ, পদ্মা পাড়ি দেওয়ার নৌযানও চলে না। কোনো রকম একটি ট্রলারে করে নদী পার হয়ে জাজিরার পদ্মা নদীর চরে নামেন। সেখানে পাঁচ কিলোমিটার হাঁটার পর সুরমার প্রসববেদনা ওঠে। তখন চরের একটি বাড়িতে নেওয়া হয় সুরমাকে। বিকেল পাঁচটার দিকে কন্যাসন্তান জন্ম দেন ওই নারী।
সন্তান প্রসবের পর ওই নারীর শারীরিক অবস্থা কিছুটা নাজুক হলে চর থেকে রাজ্জাক মাঝি নামের এক ব্যক্তি ফোন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান ভূইয়া ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানকে। তাঁরা স্বাস্থ্যকর্মীদের পাঠিয়ে নৌ অ্যাম্বুলেন্সে করে ওই প্রসূতি ও নবজাতককে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনেন। ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তাঁদের সেখানে ভর্তি করা হয়। এরপর মা ও নবজাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
বরগুনার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তাকে মা ও নবজাতকের শারীরিক অবস্থার খোঁজ রাখার অনুরোধ করা হয়েছে। শরীয়তপুর জেলা প্রশাসনও খোঁজখবর রাখছে।
সুস্থ হওয়ায় গতকাল সোমবার বিকেলে জাজিরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করা হয়। ভাড়া করা একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে (প্রাইভেট কার) করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। সোমবার রাতে গ্রামে পৌঁছালে পদ্মাকে দেখতে ভিড় জমায় আশপাশের মানুষ।
ওই নবজাতকের বাবা মো. নাহিদ বলেন, ‘আমি গরিব শ্রমিক, সংসার চালাতেই হিমশিম হচ্ছে। তার ওপর স্ত্রী সন্তানসম্ভবা, অনেক খরচ। তাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে ওই পথে গ্রামে ফিরছিলাম। চরের মধ্যে যে বিপদে পরেছিলাম, তা বলে বোঝাতে পারব না। মানুষ আমাদের সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছেন। আমি তাদের প্রতি, স্থানীয় প্রশাসন ও চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
মুঠোফোনে সুরমা আক্তার বলেন, ‘আমি প্রথম সন্তানের মা হয়েছি। অনেক বড় বিপদ ঘটতে পারত। মানুষ এগিয়ে আসায় আমার সন্তানটা বাঁচতে পেরেছে। আমার মেয়েটাও এই ঘটনা সারা জীবন বহন করবে। সুস্থ অবস্থায় সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পেরে আমি আনন্দিত।’
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান ভূইয়া বলেন, সোমবার মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। উভয়ের শারীরিক অবস্থা ভালো আছে বলে চিকিৎসকেরা জানানোর পর তাঁদের কাছে বাড়ি যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা বরগুনায় যেতে চান। এরপর তাঁদের নিরাপদে বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান বলেন, বরগুনার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তাকে মা ও নবজাতকের শারীরিক অবস্থার খোঁজ রাখার অনুরোধ করা হয়েছে। তাঁরাও খোঁজখবর রাখছেন। জেলা প্রশাসক বলেন, ‘করোনা নিয়ে আমরা যখন হাঁপিয়ে উঠছিলাম, তখন সুরমা ও নাহিদ দম্পতির সন্তান পদ্মা আমাদের মধ্যে একচিলতে সুখ হয়ে এসেছিল। সেই সুখটুকু তাদের পরিবারে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরাও সুখী।’