ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ভোলার ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে চরফ্যাশন উপজেলার কুকরি-মুকরি ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামে
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ভোলার ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে চরফ্যাশন উপজেলার কুকরি-মুকরি ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামে

ইয়াসের প্রভাবে ভোলার অর্ধশতাধিক চরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে গতকাল সোমবার বিকেল থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ভোলার বিভিন্ন উপজেলায় ঝোড়ো বাতাস বইছে। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জোয়ারের উচ্চতা বেড়েছে। এতে জেলার ছয়টি উপজেলার অর্ধশতাধিক চরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণের ইউনিয়নগুলো আজ মঙ্গলবার সকালের জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, রাতের জোয়ারে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে মেঘনা-তেতুলিয়ায় দুপুরের দিকে জোয়ার আসবে।

সাগর মোহনার ইউনিয়ন ঢালচর থেকে মৎস্য ব্যবসায়ী শাহে আলম ফরাজি বলেন, সোমবার দুপুরের পর থেকে বাতাস বইছে। বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে। মানুষজন জরুরি আসবাব নিরাপদে সরিয়ে রাখছে। রাতের জোয়ারে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। মঙ্গলবার সকালে বাতাস ও জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে।

ঢালচর ইউনিয়নের ঢালচর ও চর নিজামের চারপাশে কোনো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নেই। নেই পর্যাপ্তসংখ্যক ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। এসব এলাকায় জেলেদের ট্রলার রাখার নিরাপদ খাল নেই। চরফ্যাশন উপজেলায় ঢালচর, কুকরি-মুকরি ও মুজিবনগর ইউনিয়ন দুর্গম। তবে কুকরি-মুকরি ও মুজিবনগর ইউনিয়নের চর পাতিলা, মুজিবনগরের সিকদারের চর এবং ঢালচর পুরোটা অরক্ষিত। জোয়ারেও এসব অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

ঢালচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ. সালাম হাওলাদার বলেন, ইউনিয়নের মানুষ সারা রাত ঘুমাতে পারেনি। তারা মালামাল নিরাপদে রাখা নিয়ে ব্যস্ত ছিল।
চরফ্যাশন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিন বলেন, এসব চরাঞ্চল থেকে মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে আনার জন্যে মোট ১৫টি ট্রলার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতি ইউনিয়নের জন্য ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তবে এখনো দেওয়া হয়নি।

মনপুরা উপজেলার কলাতলি, চর ডেম্পিয়া, সোনার চর, চর সামসুদ্দিনে কোনো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নেই। এসব এলাকাও জোয়ারের সময় প্লাবিত হয়। লালমোহন উপজেলার চর কচ্ছপিয়া ও চর শাহজালালের একই অবস্থা।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, তজুমদ্দিন উপজেলার চর জহিরুদ্দিন, চর মোজাম্মেল, দৌলতখান উপজেলার হাজিপুর, নেয়ামতপুর, ভবানীপুর ও মদনপুর এবং ভোলা সদর উপজেলার চর কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চর, চর বৈরাগী, বারাইপুর, ভোলার চর, কানাবগির চর, রামদাসপুর, রুপাতলি, রাজাপুর, পশ্চিম ইলিশা, ভেদুরিয়া, ভেলুমিয়া ইউনিয়ন, চর চটকিমারার চারদিকে কোনো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নেই। এসব এলাকায় পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নেই। তাই এসব এলাকার মানুষদের নিরাপদে আনার প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ভোলার নদী তীরের এলাকাগুলো জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার কুকরি-মুকরি ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামে

লালমোহনের ইউএনও আল নোমান বলেন, ‘তাঁরা খাবার সংগ্রহের জন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। খাবারের মজুত করতে বলেছেন। যাতে প্রয়োজনের সময় সংকট না হয়। চারটি ট্রলার রাখা হয়েছে পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষের জন্য। যদি কোনো খারাপ ইঙ্গিত পাই, তাহলে ব্যবস্থা নিতে পারি।

মনপুরা উপজেলার চর কলাতলির মো. মোসলেহউদ্দিন বলেন, তাঁদের এলাকায় একদফা বৃষ্টি হয়েছে, তা–ও সামান্য। বাতাস আছে, তা–ও সামান্য। তবে জোয়ারে এলাকায় দুই-তিন হাত পানি উঠে খেতের ফসল ডুবে গেছে, পুকুর তলিয়ে গেছে, পশুখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। দিনের জোয়ার এখনো আসেনি, তবে দিনের জোয়ারে পানি বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. ফারুক হোসেন দৌলত বলেন, ইউনিয়নে ১১টি মসজিদের ইমামকে মাইক দিয়ে সব চরবাসীকে তাদের জরুরি আসবাব গুছিয়ে রাখার জন্য বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে।