এক ওষুধের দোকানে মাদক বিক্রি করা হয় বলে হঠাৎ তল্লাশি শুরু করেন পুলিশের দুই উপপরিদর্শকসহ (এসআই) তিন পুলিশ সদস্য। বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক বুঝতে পেরে পুলিশের ওই তিন সদস্যকে দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন এলাকাবাসী। পরে এক ইউপি সদস্যের হস্তক্ষেপে জনতার হাত থেকে মুক্তি মেলে তাঁদের। এ ঘটনা ঘটে গত শনিবার রাতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের আদমপুর ইউনিয়নের মধ্যভাগ বাজারে।
আজ রোববার সকালে ঘটনাস্থলে গেলে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, শনিবার রাত নয়টায় কমলগঞ্জ থানার এসআই সিরাজুল ইসলাম, এসআই হারুন-অর-রশীদ ও আরও এক পুলিশ সদস্য মধ্যবাগ বাজারের নিউ মেডিসিন কেয়ার ফার্মেসিতে অতর্কিতে তল্লাশি শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ, ফার্মেসির মালিক স্বপন কুমার সিংহ ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
এলাকাবাসী বলেন, ওষুধের দোকানের মালিক এর প্রতিবাদ করলেও তিন পুলিশ সদস্য কিছুই শুনতে রাজি হননি। তাঁরা একপর্যায়ে নিজেদের কাছে রাখা কয়েকটি ইয়াবা ট্যাবলেট রেখে তা উদ্ধারের নাটক করেন। এ ঘটনায় মধ্যভাগ বাজারসহ আশপাশ এলাকার লোকজন ছুটে এসে তিন পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাতে এ বিক্ষোভের খবর ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় ব্যক্তিদের ভাষ্য, স্বপন কুমার সিংহ খুবই সৎ, নিষ্ঠাবান ও জনপ্রিয় ব্যবসায়ী। কারও ইন্ধনে চুক্তিবদ্ধ হয়ে পুলিশের ওই তিন সদস্য ওই ফার্মেসিতে তল্লাশি চালান। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে লোকজন জড়ো হতে থাকলে পাশের ইসলামপুরের ইউপি সদস্য সমুজ মিয়াসহ কয়েকজন এসে বিষয়টি পরে বসে দেখা যাবে বলে রাত ১১টার দিকে অবরুদ্ধ তিন পুলিশ সদস্যকে বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে ছাড়িয়ে নেন।
স্বপন কুমার সিংহ বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওষুধের ব্যবসা করছেন। পাশাপাশি সব সময় মাদক সেবন ও ব্যবসার বিরুদ্ধে অবস্থান তাঁর। শনিবার রাতে ওষুধের দোকানে ইয়াবা পাওয়া গেছে বলে দায়ী করে একটি সাদা কাগজে স্বপনের স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করেন পুলিশ সদস্যরা। এলাকাবাসী সোচ্চার না হলে রাতেই মাদক ব্যবসার অভিযোগ দিয়ে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেত বলে দাবি স্বপনের। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন তিনি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন বলেন, স্বপন কুমার একজন মানুষ ভালো। এলাকায় সততা ও নিষ্ঠার জন্য তাঁর সুনাম আছে। চেয়ারম্যানও মনে করেন, কারও ইন্ধনে শনিবার রাতে কমলগঞ্জ থানার এসআই সিরাজ ও এসআই হারুন মাদক উদ্ধারের নাটক করেছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তিনি।
অভিযোগ সম্পর্কে এসআই সিরাজুল ইসলাম ও এসআই হারুন-অর-রশীদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান। তিনি বলেন, গোপন তথ্য ছিল, ওই ফার্মেসিতে ইয়াবা বড়ি বিক্রি হয়। দুজন এসআই সেখানে গিয়ে পরে জানতে পারেন, ফার্মেসি ব্যবসায়ী স্বপন কুমার সিংহ একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান। তিনি স্থানীয়ভাবে খুবই জনপ্রিয় ব্যক্তি। এলাকাবাসী কিছুটা উত্তেজিত হলে পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে ফিরে আসেন। তথ্যগত ভুলের কারণে এমন ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলে মনে করেন ওসি।