হাল সময়ে বাংলাদেশের ‘শ্রেষ্ঠ বলী’ বলা হয় তাঁকে। চট্টগ্রামের এতিহ্যবাহী ‘জব্বারের বলীখেলা’য় ১২ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। যুগ্মভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন আরও তিনবার। কক্সবাজারের বিখ্যাত ‘ডিসি সাহেবের বলীখেলা’তেও ১৫ বার চ্যাম্পিয়ন আর তিনবার যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। দুর্দান্ত এই বলী খেলোয়াড়ের নাম দিদারুল ইসলাম। সারা দেশে তিনি ‘দিদার বলী’ নামেই খ্যাত। দীর্ঘ খেলোয়াড়ি জীবনে ‘হার’ বলতে কিছু নেই তাঁর।
সেই বিখ্যাত দিদার বলী এবার অংশ নিতে পারছেন না ডিসি সাহেবের বলীখেলায়। মাদক কেলেঙ্কারিতে তিনি বাদ পড়েছেন খেলা থেকে। অনেকে বলছেন, এর মধ্য দিয়ে দিদার বলীর খেলোয়াড়ি জীবন হুমকির মধ্যে পড়ল। কারণ, এর আগে তিনি ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলা থেকে অবসর নিয়েছেন। এখন এই আসর থেকে বাদ পড়ায় হয়তো খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানতে হবে তাঁকে।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দিদার বলী দাবি করেছেন, তাঁকে পরিকল্পিতভাবে ইয়াবা–জালে ফাঁসানো হয়েছে। এখন খেলা থেকেও পরিকল্পিতভাবে বাদ দেওয়া হচ্ছে।
গত বছরের ২৮ জুন ময়মনসিংহে দুই বন্ধুসহ ইয়াবা নিয়ে আটক হন দিদার বলী। ১১ দিন কারাভোগও করেন। ময়মনসিংহে ইয়াবা নিয়ে আটকের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। তাঁর মতো একজন দর্শকপ্রিয় বলীর এমন কাণ্ডে চারদিকে ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছিল। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তাঁর ভক্তরাও এই নিয়ে ক্ষুব্ধ হন। মাদকসম্পৃক্ত ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে ক্রীড়াঙ্গন থেকে বাদ দেওয়ার দাবি ওঠে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জনদাবির মুখে আসছে বলীখেলায় বাদ যাচ্ছে দিদার বলীর নাম।
দিদার বলীর ভাষ্য, গত বছরের ২৮ জুন ময়মনসিংহে গিয়ে গাড়ি ছিনতাইকারী চক্রের কবলে পড়েন তিনিসহ তাঁর তিন বন্ধু। ছিনতাইকারীরা তাঁর গাড়ি ছিনতাইয়ে ফেঁসে গিয়ে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ৮০টি ইয়াবা দিয়ে দিদার ও তাঁর বন্ধুদের পুলিশের হাতে তুলে দেন।
কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্র জানায়, আগামী ৩ ও ৪ মে শহরের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ডিসি সাহেবের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা। ১৭ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের শহীদ এ টি এম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে বলীখেলার প্রস্তুতি সভা হয়। ওই সভায় দিদার বলীকে খেলা থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দিদার বলীর বাড়ি কক্সবাজারের রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি উমখালী গ্রামে। ১৯৯৮ সাল থেকে বলীখেলা শুরু করেন তিনি। ২০০১ সাল থেকে কক্সবাজারের ডিসি সাহেবের বলীখেলায় অংশগ্রহণ শুরু করেন। অংশগ্রহণ করেই লাগাতার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি। একই সময়ে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলাতেও টানা চ্যাম্পিয়ন ট্রফি অর্জনের ইতিহাস গড়েন। ইয়াবা সম্পৃক্ততায় সব অর্জনই এখন ম্লান হওয়ার পথে।
দুই বছর আগে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা দেন দিদার বলী। কিন্তু অন্য বলীখেলাগুলোয় অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখেন।
ডিসি সাহেবের বলীখেলার সদস্যসচিব হেলাল উদ্দিন কবির বলেন, ১৭ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে বলীখেলা আয়োজক কমিটির সভায় দিদার বলীর বিরুদ্ধে মাদকসম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলেন এক সদস্য। ওই সদস্যের প্রস্তাবের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন দিদার বলীকে খেলা থেকে বাদ দেওয়ার ঘোষণা দেন। এখন পর্যন্ত ওই সিদ্ধান্তই বহাল রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন সরকারি সফরে বিদেশে অবস্থান করছেন। তাই এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ এপ্রিলের সভায় দিদার বলীকে খেলা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত আশা করি বহাল থাকবে।’