ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া-গ্যাসে পুড়ে যাচ্ছে খেত

ক্ষতিগ্রস্থ ১০-১২ জন কৃষক লিখিত অভিযোগ করেছেন। এরই মধ্যে ৫০-৬০ বিঘা জমির ধানের ক্ষতি হয়েছে।

ইটভাটার ধোঁয়ায় পুড়ে যাওয়া ধানখেত। জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার সোনাপুর মাঠে

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার একটি ইটভাটার পাশের বোরো ধানখেত পুড়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ৫০ বিঘার বেশি জমির ধানখেতের পাতা পুড়ে গেছে। দিন দিন ধানের পাতা পোড়ার পরিমাণ বাড়ছে। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার ক্ষতিগ্রস্থ ১০-১২ জন কৃষক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। কৃষকদের অভিযোগ ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাসে তাঁদের ধানখেতের এমন ক্ষতি হচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন ও কৃষকদের ভাষ্য, উপজেলার সোনাপুর মাঠের বেশির ভাগ জমিতে ধানের শীষ দেখা দিয়েছে। কিছুদিন পর কৃষকের ঘরে ধান ওঠার কথা। বোরোর শুরু থেকে বিবিএম নামে পাশের ইটভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছিল। সম্প্রতি হঠাৎ করেই ওই ভাটায় ইট পোড়ানো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া চিমনির বদলে নিচ দিয়ে বের হয়েছে। এর প্রভাবে আশপাশের ধানখেতের পাতা পুড়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ৫০ থেকে ৬০ বিঘা বোরো খেত নষ্ট হয়েছে। এসব ধানখেতের কোনোটার অর্ধেক, আবার কোনোটার পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।

সোনাপুর তাঁতীপাড়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক জফুর উদ্দীন মণ্ডল কান্নাজাড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে আমার চার বিঘা জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে ইটভাটার মালিকের সঙ্গে কথা বলে কোনো লাভ হয় না। কৃষি অফিস থেকে লোক এসে পরিদর্শন করেছেন। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা কৃষি কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

বিবিএম ইটভাটার মালিক আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ইটভাটার কারণেই যে জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা পুরোপুরি ঠিক নয়। তারপরও কৃষকদের বলেছেন, তাঁদের যে পরিমাণ ধানের ফলন কম হবে, বাজারদর অনুযায়ী সে পরিমাণ টাকা দিয়ে দেওয়া হবে।

কৃষক সেলিম মিয়া বলেন, অন্যের কাছ থেকে সাত হাজার টাকায় সাত বিঘা জমি নিয়ে ধান চাষ করেছেন। লাভ তো দূরের কথা, এখন খরচের টাকা নিয়ে চিন্তিত। ইটভাটার গ্যাসে তাঁর বোরোখেত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাঁর মতো এলাকার আরও ৩০-৪০ জন কৃষকের ধানখেত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখন কৃষকদের ধানখেতের দায়ভার কে নেবেন, প্রশ্ন সেলিম মিয়ার।

কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আর মাত্র কয়েক দিন পর আমরা ধান কেটে ঘরে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছিলাম। আমাদের সেই স্বপ্ন আর বাস্তবে পরিণত হচ্ছে না। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় আমাদের ধানখেত নষ্ট হচ্ছে। কৃষি বিভাগের লোকজনের পরামর্শে ক্ষতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। কিন্তু দিন যাচ্ছে আরও বেশি ক্ষতি হচ্ছে।’

উপজেলা কৃষি বিভাগের লোকজন এসে ইটভাটার পাশের ফসলের মাঠ পরির্দশন করেছেন। কৃষি কর্মকর্তা লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ইটভাটা বন্ধ করার কারণে চেম্বারে যে গ্যাস ছিল তা ওপর দিয়ে না গিয়ে নিচ দিয়ে নির্গত হয়েছে। বিষাক্ত গ্যাসে ৫০–৬০ বিঘা জমির ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে আজকে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা তাঁর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ক্ষতির পরিমাণ যাতে বৃদ্ধি না পায় সেজন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরমান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ধানখেত নষ্ট হওয়ার কথা জেনেছেন। কৃষকদের অভিযোগ পেলে প্রয়োজন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।