ইটভাটার গ্যাসের তাপে পুড়ল শত বিঘার ধান

গত রোববার অভিযোগ দেওয়ার পর উপজেলা কৃষি বিভাগ সরেজমিন পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে।

পাবনায় ইটভাটার নির্গত গ্যাসের তাপে ধান পুড়ে ধূসর হয়ে গেছে। সুজানগর উপজেলার হাটখালী গ্রাম

পাবনার সুজানগরে একটি ইটভাটার গ্যাসের তাপে কৃষকদের প্রায় এক শ বিঘা জমির ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। স্থানীয় কৃষকদের আপত্তির পরও শাহজাহান হোসেন নামের এক ব্যক্তি অবৈধভাবে কৃষিজমির মাঝখানে ভাটা স্থাপন করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

ভাটাটির অবস্থান উপজেলার হাটখালী ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রামে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা ক্ষতিপূরণ দাবির পাশাপাশি ভাটাটি বন্ধের দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। গত রোববার অভিযোগ দেওয়ার পর উপজেলা কৃষি বিভাগ সরেজমিন পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে।

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাফিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ইট পোড়ানোর সময় ভাটায় একপ্রকার গ্যাস জমে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, জমে থাকা গ্যাস কোনোভাবে চুল্লি দিয়ে বের হয়ে গেছে। পরবর্তী সময়ে ওই গ্যাসের তাপেই কৃষকের ধান পুড়ে নষ্ট হয়েছে।

উপজেলার হাটখালী ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রাম। হাটখালী ও উদয়পুর গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ফসলের আবাদ হয়। চলতি মৌসুমে ধানের আবাদ হয়েছে। স্থানীয় কৃষকেরা এ ধানেই সারা বছরের খাবার জোগান করেন।

ইউএনওর কার্যালয়ে দেওয়া অভিযোগপত্র ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শাহজাহান হোসেন নামের স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি দুই ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকাতে ইটভাটা তৈরি করেছেন। ভাটা স্থাপনের সময় কৃষকেরা বাধা দিলেও তিনি তোয়াক্কা করেননি। চলতি মৌসুমে পুরোদমে ইটভাটাটিতে ইট পোড়ানো চলেছে। ভাটার ধোঁয়ায় ধানের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপরও কৃষকেরা প্রতিবাদ করতে পারেননি। এর মধ্যে গত সপ্তাহের শেষ দিকে হঠাৎ করেই ভাটা থেকে গরম একধরনের ধোঁয়া বের হতে থাকে। এতে বিঘার পর বিঘা ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবি, ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী কৃষিজমি ও বছরে একের অধিক উৎপাদিত ফসলি কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপন না করার বিধান রয়েছে। এরপরও শাহজাহান হোসেন কোনো নিয়মনীতি না মেনে ভাটাটি স্থাপন করেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, একদিকে গ্রাম, অপর দিকে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। পাশেই বিশাল এলাকা নিয়ে তৈরি হয়েছে ইটভাটা। ভাটা থেকে খানিকটা দূরে এগোলেই ক্ষতিগ্রস্ত ধানের জমি। সবুজ ধানগাছগুলো লালচে রং ধারণ করেছে, আর সোনালি ধান পুড়ে হয়েছে ধূসর।

হাটখালী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বকুল শেখ বলেন, তিনি ঋণ নিয়ে ৩ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছিলেন। আবাদে তাঁর প্রায় ৩৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা ছিল নতুন ধান উঠলে ঋণ পরিশোধ করে বছরের খাবার চাল পাবেন। কিন্তু ইটভাটার আগুন তাঁর সে আশা শেষ করে দিয়েছে। পুরো জমির ধান নষ্ট হয়ে তিনি এখন অসহায় বোধ করছেন।

লোকমান হোসেন নামের অপর এক কৃষক বলেন, প্রায় সাত বছর আগে ইটভাটাটি তৈরি হয়েছে। তখন থেকে মাঠে ফসল কমে গেছে। এবার পুরো এক শ বিঘা জমির ফসল পুড়ে নষ্ট হয়ে গেল। মোহন উদ্দিন নামের এক কৃষক বলেন, ‘চার বিঘা জমিত থেন গেলবার ৮৪ মণ ধান পাইছিলেম। ইবার পুড়ে সব চিটে হয়া গেছে। কী খায়া বছর যাবি, সিডাই ভাবতেছি। আমরা আমাগের ধানের দাম চাই।’

জানতে চাইলে ইটভাটার মালিক শাহজাহান হোসেন বলেন, ইটভাটার চেম্বার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গরম গ্যাসে কিছু ধানের ক্ষতি হয়েছে। এটা অনিচ্ছাকৃতভাবেই হয়েছে। কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

ইউএনও মো. রওশন আলী বলেন, মাঠ পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। কৃষকের ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি, ইটভাটাটির বৈধ কাগজপত্র যাচাই–বাছাই করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।