তজুমদ্দিনের শশীগঞ্জ হাট

‘ইজারা’ দিলেন আ.লীগ নেতা

চাঁদপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়কে খাস আদায়ের জন্য গত বুধবার লিখিত চিঠি দেয় উপজেলা প্রশাসন।

ভোলা
ভোলা

ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার শশীগঞ্জ হাটে দরপত্র আহ্বান করেও ইজারাদার পায়নি প্রশাসন। তবে সেখানে ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের খাস আদায় করছে না। ওই বাজারের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী নেতা মহিউদ্দিন পোদ্দারের নিয়োগ করা লোকজন ‘ইজারা’র টাকা আদায় করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাঁচবার দরপত্র আহ্বান করেও চাঁদপুর ইউনিয়নের শশীগঞ্জ হাটের জন্য ইজারাদার পাওয়া যায়নি। চাঁদপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়কে খাস আদায়ের জন্য গত বুধবার লিখিত চিঠি দেয় উপজেলা প্রশাসন।

শশীগঞ্জ বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, পয়লা বৈশাখ থেকে (বৃহস্পতিবার) শনিবার পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ভাইস চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন পোদ্দারের নিয়োগ করা একাধিক লোক ১০-১২ শতাংশ হারে টোল আদায় করেছেন। ক্ষুব্ধ বিক্রেতারা বৃহস্পতিবারই চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানান। চেয়ারম্যান তাৎক্ষণিক বাজার পরিদর্শনে আসেন এবং টোল আদায়কারীদের ৫ শতাংশ হারে টোল নেওয়ার জন্য চাপ দেন।

টোল আদায়ের বিষয়ে অন্য কারও সঙ্গে কোনো চুক্তি হয়নি। যদি এমন কেউ করে থাকেন, তা সম্পূর্ণ বেআইনি।
মরিয়ম বেগম, ইউএনও, তজুমদ্দিন উপজেলা

শশীগঞ্জ হাটবাজারে সরকারি টোল আদায়ের কোনো তালিকা টানানো নেই। দীর্ঘদিন ধরে ইজারাদারেরা ইচ্ছেমতো টোল আদায় করছেন। বাজারে মাটিতে বসে যাঁরা সবজি, মাছ ও মুরগিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন, তাঁদের ৫০-৫০০ টাকা টোল দিতে হচ্ছে। আর যাঁরা হাটবারে (শুক্র) মালামাল বিক্রি করতে আসেন, তাঁদের কাছে ১০-১২ শতাংশ টোল আদায় করা হচ্ছে।

মাছবাজার থেকে টাকা আদায় করেন আব্বাস মাঝি নামের এক ব্যক্তি। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘গত বছর (১৪২৮) মহিউদ্দিন পোদ্দারের কাছ থেকে শশীগঞ্জ হাটের মাছবাজার ‘ইজারা’ নিয়েছিলেন। এ বছরও ৪৫ লাখ টাকায় ডাক নিয়েছেন, যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। তারপরও চাঁদপুর ইউপির চেয়ারম্যান ৫ শতাংশ হারে ইজারা আদায় করতে বলেছেন। চেয়ারম্যানের কথা মেনেই টোল আদায় করছি।’

একই রকম মন্তব্য করেন পানবাজারের ইজারাদার জসিম আলম মামুন। তিনি বলেন, সপ্তাহে দুই দিনের জন্য পানের হাট বসে। মাসে ভাইস-চেয়ারম্যানকে ১৪ হাজার টাকা দিতে হবে।

শশীগঞ্জ বাজার ইজারা নিতে ইচ্ছুক ছিলেন, এমন কয়েকজন অভিযোগ করেন, মহিউদ্দিন পোদ্দারের নেতৃত্বে দরপত্র কেনা ও জমা দেওয়ায় বাধা দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতারাও জড়িত রয়েছেন। গত সোমবার এ বিষয়ে তাঁরা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের দ্বিতীয় তলায় সভা করেন। ওই সভায় জানানো হয়, সাতটি হাটবাজারের জন্য মাত্র একটি করে দরপত্র দাখিল হয়েছে। যাতে আগের বছর থেকে অনেক কম দর দেওয়া হয়েছে। যদি প্রশাসন খাস আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে দলীয় পছন্দের নেতা-কর্মী দিয়ে টোল আদায় করা হবে। প্রশাসনকে মাসিক ভিত্তিতে টাকা দেওয়া হবে।

ওই সভায় উপস্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক দেওয়ান। তিনি বলেন, বৈঠকে হাটবাজারের ডাক কমাতে বলা হয়েছে, যাতে মানুষ জুলুমের শিকার না হয়।

উপজেলা প্রশাসন বুধবার শশীগঞ্জ হাটবাজারের ইজারা খাস আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই দিন বিকেলে চাঁদপুর ইউপি কার্যালয়ে মহিউদ্দিন পোদ্দারের নেতৃত্বে একটি বৈঠক হয়। সেখানে শশীগঞ্জ হাটবাজারকে ১২টি ভাগে ভাগ করে এক মাসের জন্য সাব-ইজারা দেওয়া হয়। ওই সভায় উপস্থিত শশীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সেলিম তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মহিউদ্দিন পোদ্দার বলেন, তিনি একটি বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানে অন্য কিছু নিয়ে আলোচনা হয়নি।

ইউএনও মরিয়ম বেগম বলেন, যে হাটবাজারের ডাক হয়নি, সেখানে টোল ওঠাবেন তহশিলদার। সেখানে টোল আদায়ের বিষয়ে অন্য কারও সঙ্গে কোনো চুক্তি হয়নি। যদি এমন কেউ করে থাকেন, তা সম্পূর্ণ বেআইনি। বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নেবেন।