ইছামতী নদী এখন মরা খাল

কাজীপুরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ইছামতী নদী। গত শুক্রবার দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো
কাজীপুরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ইছামতী নদী। গত শুক্রবার দুপুরে।  ছবি: প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ইছামতী নদী খনন ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। অনেক বছর ধরে ইছামতী নদী খনন করা হবে, সচল করা হবে—এ ধরনের কথা শোনা গেলেও বাস্তবে কিছুই হয়নি।

অথচ একসময় প্রবাহিত এ নদীকে ঘিরেই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছিল হাটবাজার ও ব্যবসাকেন্দ্র। নদীটিকে কেন্দ্র করেই বহু মানুষ জীবন-জীবিকার পথ খুঁজে পেয়েছিলেন। এ নদীর পানি দিয়েই কৃষকেরা দুই পারের শত শত হেক্টর জমিতে ধান, গম, পাট, আখসহ নানান ফসল ফলাতেন। এখন সেটি যেন শুধুই স্মৃতিকথা। সেই খরস্রোতা ইছামতী এখন মরা খালে রূপ নিয়েছে।

স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, একসময় ইছামতীর দুই পাশ ছিল ফল-ফসলে ভরা। মাইলের পর মাইল জুড়ে সে কি এক নয়নাভিরাম দৃশ্য! ছোট-বড় নানা প্রজাতির মাছের অফুরন্ত উৎস ছিল এই ইছামতী। মাছও পাওয়া যেত সারা বছর। জীবিকার জন্য জেলেরা রাতদিন সমানে ডিঙ্গি ও ছোট নৌকা দিয়ে মাছ ধরতেন। প্রচুর মাছ ধরা পড়ত জেলেদের জালে। সেই মাছ বিক্রি করেই জেলেরা সংসার চালাতেন। এসব এখন শুধুই অতীত। সময়ের ব্যবধানে সেই ভরা যৌবনা ইছামতী ক্রমেই মরা খালে পরিণত হতে চলায় নদীটিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সব হাটবাজার এখন হয়েছে
বিরান অঞ্চল। কৃষি জমিগুলো পরিণত হয়েছে ধু ধু প্রান্তরে। জেলেপাড়াগুলোও হয়ে গেছে প্রায় বিলীন। এককথায় থমকে গেছে নদী, আর নিভে গেছে বিপুল সম্ভাবনাময় কর্মযজ্ঞ।

গত শুক্রবার সরেজমিনে কথা হয় জেলার কাজীপুর উপজেলার ইছামতীর পারের মানুষগুলোর সঙ্গে। স্থানীয় গান্ধাইল গ্রামের আবুল হোসেন জানান, ভৌগোলিকভাবে এ নদীর প্রবহমান এলাকাগুলোর পরিবেশ ছিল চমৎকার। এসব সম্ভাবনা এক দিনে নিভে যায়নি। কেউ এসব নিয়ে মাথা ঘামায়নি। একসময়ের খরস্রোতা উত্তাল এ নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হলে এটি অন্তত মরা খালে পরিণত হতো না।

>অনেক বছর ধরে ইছামতী নদী খনন করা হবে, সচল করা হবে—এ ধরনের কথা শোনা গেলেও বাস্তবে কিছুই হয়নি।

কাজীপুর সদরের আবদুল জলিল জানান, স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের সুনজরের অভাবে একশ্রেণির দখলবাজরা নদীর অনেক স্থান দখলে নিয়ে খুশিমতো ভরাট করে ফেলেছেন। অনেকে নানান বর্জ্য ফেলে দূষণ করাসহ নদীর তলদেশ ভরাট করছেন। অনেকে আবার যত্রতত্র থেকে বালু উত্তোলন ও পাড় কেটে মাটি বিক্রির প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছেন।

কাজীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান জানান, এখনই নদীটি খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করা না হলে একসময়ের সেই উত্তাল ইছামতী নদী একসময় মানচিত্র থেকেই বিলীন হয়ে যাবে। ইছামতী নদীকে প্রবহমান রাখতে হলে পাউবো ও স্থানীয় সরকার দপ্তরের সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি। নামমাত্র স্বল্প বাজেটে নদীটির কোনো উন্নয়ন হবে না; এর জন্য পরিকল্পিত যথার্থ বাজেট প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, জেলার ছোট নদী ও খালগুলো খননের এখন প্রথম পর্যায় চলছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০৩ কিলোমিটার ছোট নদী ও খাল খননের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ প্রস্তাবের মধ্যে ইছামতী নদীর নামও রয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলেই যথাক্রমে নদীটি খননের কাজ শুরু হবে।