সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আজ বুধবার বিকেলে দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১০ জন। এ ঘটনায় চারটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গুরুতর আহত তিনজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত বাকিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
নিহত ব্যক্তির নাম আবদুল জলিল (৩৮)। তিনি বেলকুচি উপজেলার আজগড়া গ্রামের বাসিন্দা। আহত ব্যক্তিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষ একে অপরকে দায়ী করেছে।
এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম জানান, বেতিল বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে আজ দিনব্যাপী সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের প্রথম পর্যায় আলোচনার মাধ্যমে শেষ হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি পদে দুজন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সম্মেলনে স্থানীয় সাংসদ আবদুল মমিন মণ্ডল, সাবেক মন্ত্রী বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ বিশ্বাসসহ জেলা, উপজেলা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে পথচারী জলিলের ওপর হামলা করেন অস্ত্রধারীরা। এ সময় ঊরুতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তিনি মারা যান।
সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মোট চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। তাঁরা হলেন বর্তমান সাংসদ আবদুল মমিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত সভাপতি পদে শাহাদত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক পদে বুদ্দু মিয়া। অপর দিকে সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাসের অনুসারী হিসেবে পরিচিত সভাপতি পদে সিরাজুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক পদে মনিরুল ইসলাম।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ভোট গ্রহণ প্রায় ৮০ ভাগ শেষ হলে সভাপতি পদে সাবেক সভাপতি সিরাজুল আলমকে হারিয়ে শাহাদত হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনিকে হারিয়ে বুদ্দু মিয়া জয়ী হচ্ছেন এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় সভাপতি-সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে পথচারী জলিলের ওপর হামলা করেন অস্ত্রধারীরা। এ সময় ঊরুতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তিনি মারা যান। এ ছাড়া উভয় পক্ষের আরও কয়েকজন আহত হন। এ সময় চারটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
এনায়েতপুর-সিরাজগঞ্জ সড়কের খামারগ্রাম ডিগ্রি কলেজের পাশে সড়কের ওপর থেকে নিহত জলিলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর ঊরুতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কীভাবে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন, তা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।আতাউর রহমান, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), এনায়েতপুর থানা
এদিকে পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে সাংসদ আবদুল মমিন মণ্ডলকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। সম্মেলনস্থলেই একটি কক্ষে আটকে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ বিশ্বাসসহ দলীয় নেতারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এনায়েতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এনায়েতপুর-সিরাজগঞ্জ সড়কের খামারগ্রাম ডিগ্রি কলেজের পাশে সড়কের ওপর থেকে নিহত জলিলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর ঊরুতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কীভাবে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন, তা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনায় গুরুতর আহত তিনজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।