ইউএনও ওয়াহিদার ওপর হামলার ঘটনায় আরেকজন আটক

ঢাকার আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে ওয়াহিদা খানমের অস্ত্রোপচার হয়েছে।
ফাইল ছবি

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউওনও) ওয়াহিদা খানম ও তাঁর বাবা ওমর আলীর ওপর হামলার ঘটনায় আরেকজনকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। আজ শুক্রবার বেলা দুইটার দিকে ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়।

আটক করা ব্যক্তির নাম নবীরুল ইসলাম (৩৮)। তাঁকে ঘোড়াঘাট উপজেলা সংলগ্ন চক বামনদিয়া বিশ্বনাথপুর গ্রাম থেকে আটক করা হয়।  

ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রথম আলো প্রতিনিধিকে র‌্যাবের এক সদস্য জানান, আটক নবীরুলকে রংপুর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

নবীরুল ইসলাম

এর আগে হামলার ঘটনায় আজ শুক্রবার ভোর পাঁচটার দিকে র‍্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে যুবলীগ নেতাসহ দুজনকে আটক করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার আহত ইউএনও ও তাঁর বাবাকে উদ্ধারের পর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নৈশপ্রহরী নাহিদ হোসেন পলাশকে (২৬) নিয়ে যায়।

পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে নৈশপ্রহরী গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

আজ ভোরে আটক করা দুজন হলেন ঘোড়াঘাট উপজেলার ওসমানপুর সাগরপাড়া এলাকার আবুল কালামের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন (৪২)। অন্যজনএকই উপজেলার রানীগঞ্জ কষিগারি এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে আসাদুল ইসলাম (৩৫)।

জাহাঙ্গীর ২০১৭ সাল থেকে ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে দিনাজপুর-৬ আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সাংসদ শিবলী সাদিক বলেন, ‘জাহাঙ্গীর বেপরোয়া টাইপের। কিছুদিন আগে আমার ওপরও হামলার চেষ্টা করেছিলেন।’

গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বিরামপুর, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট থানার পুলিশের একটি দল আজ ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে হাকিমপুর উপজেলার কালিগঞ্জ এলাকায় বোনের বাসা থেকে আটক করে আসাদুলকে। তাঁকে রংপুর রেঞ্জের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়।
অন্যদিকে, দিনাজপুরের র‍্যাবের সদস্যরা জাহাঙ্গীর হোসেনকে তাঁর নিজ বাসা থেকে আটক করেন।

আটক করা দুজন মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ী। তাঁদের নামে থানায় কয়েকটি মাদক মামলা রয়েছে। তবে কী কারণে ইউএনওর ওপর তাঁরা হামলা করেছেন, সে বিষয়ে এখুনি কিছু বলা যাচ্ছে না
হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ

হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, আটক করা দুজন মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ী। তাঁদের নামে থানায় কয়েকটি মাদক মামলা রয়েছে। তবে কী কারণে ইউএনওর ওপর তাঁরা হামলা করেছেন, সে বিষয়ে এখুনি কিছু বলা যাচ্ছে না।

হামলার ঘটনায় ইউএনওর ভাই শেখ ফরিদ উদ্দিন বাদী হয়ে ঘোড়াঘাট থানায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে অজ্ঞাতনামা চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার মধ্যরাতে ইউএনওর সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর কেটে দুর্বৃত্তরা তাঁর শয়নকক্ষে ঢুকে পড়ে। এর আগে দুর্বৃত্তরা ওই বাসভবনের নিরাপত্তাপ্রহরীকে বেঁধে প্রহরীকক্ষে তালা দিয়ে আটকে রাখে। ইউএনওর বাবা ওমর আলী (৬০) প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হন। কিন্তু গতকাল সকালে তিনি হাঁটতে বের না হওয়ায় সঙ্গীরা তাঁর খোঁজ নেওয়ার জন্য বাসভবনে যান। অনেক ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে তাঁরা পুলিশে খবর দেন।

পরে পুলিশ গিয়ে ইউএনও, তাঁর বাবা ও প্রহরীকে উদ্ধার করে। আহত বাবা-মেয়েকে গতকাল সকালে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ওয়াহিদাকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হয়। তিনি এখন ঢাকার আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে চিকিৎসাধীন। ওয়াহিদার বাবা রংপুর মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।