ইউএনওকে দায়মুক্তি, ইউপি সদস্যকে দায়ী করে প্রতিবেদন

ফরিদ আহমেদ কাঁদতে কাঁদতে সদরের ইউএনও আরিফা জহুরাকে বলছিলেন যে করোনায় তাঁর আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে
প্রথম আলো

জাতীয় জরুরি তথ্য সেবা ৩৩৩ নম্বরে কল করে খাদ্যসহায়তা চেয়ে উল্টো শাস্তির ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফা জহুরাকে ওই ঘটনা থেকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। দায়ী করা হয়েছে কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আইয়ুব আলীকে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম ব্যাপারী জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহর কাছে ওই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউপি সদস্যের ভুল তথ্যের জন্যই এমন ঘটনা ঘটেছে। তিনি (ইউপি সদস্য) ইউএনওকে আগে-পরে তথ্য দিয়ে কোনো সহযোগিতা করেননি।

প্রতিবেদনের বিষয়ে আজ শনিবার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, আগামীকাল রোববার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিবেদন জমা দেয়।

পাঁচ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনের সঙ্গে ১২৬ পৃষ্ঠার কাগজপত্র ও ভিডিও সংযুক্ত করা হয়েছে। সুপারিশ করা হয়েছে মানবিক খাদ্যসহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে একজনের তথ্যের ওপর নির্ভর না করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, মসজিদের ইমাম ও প্রয়োজনে সাংবাদিকদের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া যেতে পারে।

সম্প্রতি ৩৩৩ নম্বরে কল করে খাদ্যসহায়তা চান কাশিপুর ইউনিয়নের দেওভোগ এলাকার ফরিদ আহমেদ। এরপর তাঁর চারতলা বাড়ি ও হোসিয়ারি কারখানা থাকার খবর পেয়ে খাদ্যসহায়তা না দিয়ে উল্টো দুই দিনের মধ্যে ১০০ জনের মধ্যে খাদ্য বিতরণের সময় বেঁধে দেন ইউএনও আরিফা জহুরা। এ নির্দেশনা না মানলে তিন মাসের জেল হতে পারে বলে তখন ফরিদকে জানান ইউপি সদস্য আইয়ুব।

জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, প্রতিবেদনে ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তি ইউএনওর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই ঘটনার জন্য তদন্ত কমিটি ইউএনওকে দায়ী বা সতর্ক করার বিষয়ে কিছু বলেনি।

গত ২৩ মে ফরিদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেছিলেন, দেওভোগ পঞ্চায়েত কমিটির উপদেষ্টা শাহীনূর আলম তাঁকে খাদ্যসামগ্রী কেনার জন্য ৬০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। সে সময় প্রশাসনের কেউ ভুল করেননি, তাঁর (ফরিদ) কোনো অভিযোগও নেই এবং নিজের ভুলের কারণে এমন হয়েছে মর্মে স্বাক্ষর নেওয়া হয়।

ফরিদ আহমেদের খাদ্যসহায়তা চাওয়ার ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর আলোচনার শুরু হয়। পরে জানা যায় ফরিদ আহমেদ হোসিয়ারি কারখানায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন। তাঁর এক ছেলে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও দুই মেয়ে আছে। বড় মেয়ের অলংকার বন্ধক রেখে চড়া সুদে ঋণ ও ধার করা টাকায় ইউএনওর নির্দেশ অনুযায়ী খাবার বিতরণ করেন ফরিদ।

প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে কমিটির আহ্বায়ক শামীম ব্যাপারীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন এ কথা বলে আর কিছু বলতে রাজি হননি।

ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী বলেন, তিনি ওই ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানতেন না। তাঁকে অন্যায়ভাবে ফাঁসানো হয়েছে। আইয়ুব বলেন, ‘আমাকে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে। ওই ব্যক্তির (ফরিদ আহমেদ) ১০০ প্যাকেট খাবার দেওয়ার সামর্থ্য নেই, বিষয়টি ইউএনও অফিসে আমি বারবার জানিয়েছি। খাদ্য বিতরণের জন্য নিজে ফরিদকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি।’

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের বিষয়ে আজ শনিবার কথা হয় সদর উপজেলার স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে। তাঁরা বলেন, ফরিদ আহমেদকে শাস্তি দেন ইউএনও। ফরিদের টাকায় কেনা খাবার ইউএনওই বিতরণ করেন। অথচ ইউএনওর ভুলের দায় ইউপি সদস্যের ওপর চাপানো হয়েছে। এতে বোঝা যায় তদন্ত কমিটি পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদন তৈরি করেছে।