আড়াই হাজার কোটি টাকা বিক্রির আশা

এ বছর ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৭ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মূল্য ২ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা।

  • নওগাঁয় এ বছর প্রায় সাড়ে ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে।

  • প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ মেট্রিক টন।

নওগাঁ এখন আম চাষের ‘নতুন রাজধানী’। ২০২০ সালে আম উৎপাদনে শীর্ষে ছিল নওগাঁ। এ বছরও নওগাঁয় দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে আড়াই হাজার কোটি টাকার আম বিক্রি করার সম্ভাবনা রয়েছে।

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার দিবর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাহাত জামান। তিনি বলেন, আগে এলাকায় শুধু ধান, গম ও শর্ষের খেত দেখা যেত। তবে দেড় যুগ ধরে এসব ফসলি জমিতে বাণিজ্যিকভাবে আমবাগান হতে শুরু করে। এখন চারদিকে শুধু আমবাগান। আগে সবাই রাজশাহী কিংবা চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম খুঁজতেন। এখন নওগাঁর আম কিনতে মানুষ এ এলাকায় আসেন।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, এ বছর নওগাঁয় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে পোরশা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ১০ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে আম চাষ করেছেন চাষিরা। এরপর বেশি সাপাহারে ১০ হাজার হেক্টরে আমের ফলন হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় এ বছর ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৭ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যার সম্ভাব্য মূল্য ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা।

সূত্র আরও জানায়, জেলায় সবচেয়ে বেশি আম্রপালির চাষ হয়। উৎপাদিত আমের প্রায় ৬০ শতাংশই আম্রপালি। এ ছাড়া নওগাঁয় বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত আমের মধ্যে বারি-৪, ল্যাংড়া, গৌড়মতি, আশ্বিনা, হিমসাগর, গোপালভোগ ও কাটিমন আম চাষ হয়। নওগাঁয় আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে ২৫ জুন থেকে। বর্তমানে বাজারে উঠেছে হিমসাগর/ক্ষীরসাপাত, ল্যাংড়া, নাকফজলি ও আম্রপালি আম।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক শামীম ইকবাল বলেন, প্রতিবছর এই জেলায় প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষের পরিধি বাড়ছে। যদিও পোরশা, সাপাহার ও পত্নীতলা উপজেলায় আমবাগান বেশি দেখা যাচ্ছে। এসব এলাকা উঁচু বরেন্দ্র এলাকা। এসব এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক গভীরে আবার পানির প্রাকৃতিক উৎস না থাকায় সেচসুবিধাও তেমন নেই। এ ছাড়া মাটির বৈশিষ্ট্যের কারণে আমের প্রচুর ফলন হয়। আর এখানকার আমের স্বাদও খুবই ভালো। জেলায় এখন বছরজুড়েই আমের চারা বিক্রি হয়। প্রতিবছরই নতুন কৃষি উদ্যোক্তারা এ পেশায় আসছেন।

কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হতো। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জের এখন আর একচ্ছত্র আধিপত্য নেই। নওগাঁয় এ বছর প্রায় সাড়ে ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে চাষ হয়েছে ৩৯ হাজার হেক্টর জমিতে। নওগাঁয় প্রতি হেক্টর জমিতে এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ মেট্রিক টন। সেখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ মেট্রিক টন।

এদিকে নওগাঁর আমের বাজার এখন জমজমাট। গত বৃহস্পতিবার জেলার সবচেয়ে বড় আমের বাজার সাপাহারে গিয়ে দেখা যায়, আম কিনতে ভিড় করেছেন ব্যাপারীরা। এ বছর এপ্রিল ও মে মাসে কয়েক দফায় হওয়া ঝড়-বৃষ্টিতে আমের উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হওয়ায় আমচাষিরা হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন। তবে আমের ভালো দাম পেয়ে আমচাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।

আম আড়তদার ও বাজারে আম বিক্রি করতে আসা চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হিমসাগর ও নাকফজলি আমের এখন শেষ সময় চলছে। এখন চলছে ল্যাংড়া আমের ভরা মৌসুম। আর নওগাঁর ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত আম্রপালি গত তিন-চার দিন ধরে বাজারে উঠতে শুরু করেছে।

বৃহস্পতিবার সাপাহার বাজারে প্রতি মণ আম্রপালি ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। ল্যাংড়া আম ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে। প্রতি মণ হিমসাগর আম ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নাকফজলি আম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায়।

বাজার আড়তদার সমিতির সভাপতি কার্তিক সাহা বলেন, সাপাহারে ২৫০–এর বেশি আমের আড়তদার রয়েছেন। প্রতিদিন এই বাজার থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ ট্রাক আম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে যায়। আমের ভরা মৌসুমে প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হয়।