আশ্বাসে ঝুলে আছে সেতু

বুড়িতিস্তা নদীর মনসারের ঘাট ব্যবহার করেন ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী, গোলমুন্ডা ও লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ।

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নে বুড়িতিস্তা নদীর মনসারের ঘাটে সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছেন এলাকাবাসী

নদীর নাম বুড়িতিস্তা। নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নে এই নদীর মনসারের ঘাটে একটি সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। ওই এলাকার মানুষের এ চাওয়া পূরণ করছেন না কেউ। সবাই কেবল আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। সেতুর অভাবে দুর্ভোগের শেষ নেই। এতে স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা কার্যক্রম ও গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, বুড়িতিস্তা নদীর মনসারের ঘাট ব্যবহার করেন ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী, গোলমুন্ডা ও লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার হলদিবাড়ি এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বাড়লে ওই ঘাট দিয়ে পারাপার হতে হয় নৌকায় করে। নদীর গভীরতা খুব বেশি না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো বানানো হয়। এটির ওপর দিয়ে বাইসাইকেল, রিকশাভ্যান, মোটরসাইকেল ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে পারলেও ভারী যানবাহন ওঠানো যায় না।

ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, শুষ্ক মৌসুমে এলাকার মানুষজন বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করে অতিকষ্টে আসা–যাওয়া করেন। বর্ষায় মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। এলাকাটি চরাঞ্চল হওয়ায় এবং নদীতে সেতু না থাকার কারণে এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ হচ্ছে না। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন না ঘটার কারণে মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন আসছে না। যাঁরা এই এলাকায় বসবাস করেন, তাঁরাই শুধু এখানকার মানুষের কষ্টটা বোঝেন। অনেকে আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু সেতু আর হয়নি।

দুর্ভোগের শেষ থাকে না বর্ষা মৌসুমে। ওই সময়ে চলাচলের জন্য নৌকাই একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায় চারটি গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য। এলাকাবাসী জানান, সেতু না হওয়ায় স্থানীয় কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য পান না। বর্ষা মৌসুমে যানবাহনে ফসল নিয়ে পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে বাজারে নিতে হয়। এর ফলে সময় যেমন নষ্ট হয়, তেমনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়।

গোলমুন্ডা ইউনিয়নের হলদিবাড়ি গ্রামের কৃষক অলিয়ার রহমান বলেন, বর্ষাকালে তাঁদের নদী পারাপারে একমাত্র ভরসা নৌকা। সন্ধ্যার পর নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাতে কেউ অসুস্থ্ হলে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নিতে কিংবা চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হলে কোনো উপায় থাকে না। এমন পরিস্থিতিতে গ্রাম্য চিকিৎসকই ভরসা।

সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় শিক্ষার্থীদের। বর্ষাকালে ঘাট পারাপারে নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ফলে সময়মতো ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে না অনেক শিক্ষার্থী। ভোগান্তির কথা জানিয়ে ডাউয়াবাড়ি গ্রামের নবম শ্রেণির ছাত্র আমজাদ হোসেন বলে, মনসারের ঘাট দিয়ে নদীর দুই প্রান্তের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী যাতায়াত করে। বর্ষাকালে নৌকায় পারাপার হতে অনেক সময় লাগে। এ কারণে স্কুলে যেতে দেরি হয়। অনেক সময় এক–দুটি ক্লাসও মিস হয়ে যায়। এক নৌকায় অনেকজন ওঠার কারণে অনেক সময় নৌকাডুবির ঘটনাও ঘটে। এতে পানিতে পড়ে বই–খাতা ভিজে যায়।

স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সেখানে ২২৫ মিটার একটি সেতুর জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। বুয়েটের একটি কারিগরি দল এলাকা পরিদর্শন করেছে প্রায় এক বছর আগে। বিষয়টি এখন ডিজাইন ইউনিটে আছে।

এলজিইডি নীলফামারীর নির্বাহী প্রকৌশলী সুজন কুমার কর বলেন, ‘আমাদের পাঠানো প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা থেকে উচ্চপর্যায়ের কারিগরি দল সম্ভাব্যতা যাচাই করে গেছে। তারা আমাদের প্রধান কার্যালয়ে এর প্রতিবেদন দাখিল করলে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনের সাবেক সাংসদ গোলাম মোস্তফা বলেন, তিনি সাংসদ থাকাকালীন জাতীয় সংসদে কয়েকবার মনসারের ঘাটে সেতু নির্মাণের জন্য দাবি তুলেছিলেন।

এ বিষয়ে ওই আসনের বর্তমান সাংসদ মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেলের মুঠোফোনে কল করা হলে পরে কথা বলবেন বলে রেখে দেন।